বেদ যজ্ঞ
সম্মেলনঃ—০৯/ ০৭/ ২০১৬ স্থানঃ- ঘোড়শালা*
মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ –[ বেদ যজ্ঞ করে তোমরা
নিজেকে সম্পদায়ের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করো তবেই তোমরা তোমাদের ধর্ম – গুরু- ঈশ্বর
ব্রহ্মকে সর্বব্যাপী দেখতে পাবে।]
বেদের মধ্যেই বেদ
ভগবান নিজেকে তাঁর সকল সৃষ্টিকে ধরে
রাখেন। পরমেশ্বরের জ্ঞানই হচ্ছে বেদ। তাই সায়ণাচার্য তাঁর বেদের ভাষ্যের প্রারম্ভে
বলেছেন—“ যস্য নিঃশ্বসিতং বেদা যো বেদেভ্যোহখিলং জগৎ। নির্মমে তমহং বন্দে
বিদ্যাতীর্থমহেশ্বরম”।। অর্থাৎ “যে চারবেদ হতে নিখিল বিশ্বের উৎপত্তি হয়েছে, সেই
বেদচতুষ্টয় যার নিঃশ্বাস স্বরূপ এবং যিনি সর্ববিদ্যার আধার, সেই মহেশ্বরকে আমি
বন্দনা করি”। এই তত্ত্ব দ্বারা বেদের অপৌরুষেয়ত্ব ও নিত্যত্ব স্বীকৃত হয়। যা
অপৌরুষেয় ও নিত্য তা সকলের। এ কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের হতে পারে না। তাই সৃষ্টির
প্রারম্ভকাল থেকেই সারা বিশ্ব বেদের উপাসক হয়ে বৈদিক মতেই নিজের দেবত্বকে জাগিয়ে
তোলার সাধনায় রত থাকতেন এবং এক আনন্দময় সত্তার সাথে যুক্ত থাকতেন। এই উপাসনা করতে
গিয়ে হাজার হাজার ঋষির হাজার হাজার গোষ্ঠী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লেও সবায় এক সনাতন
ধর্মের মধ্যেই অবস্থান করতেন বেদকে নিয়েই। বেদের সোমরস অর্থাৎ আনন্দ-ই ছিলেন
তাঁদের প্রধান দেবতা। এই আনন্দযজ্ঞেই তাঁরা সকলকে আহ্বান জানাতেন। কোন মন্ত্র নিচে আর কোন
মন্ত্র উপরে স্থান পাবে তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও বেদের সত্যতার প্রতি অবিশ্বাস তাঁদের
অন্তরে কাজ করতো না। এর মূলে ছিল এক সনাতন ধর্মের প্রতি অটল বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা। সে সময় সারা
বিশ্ব জুড়েই মানুষ ছিল এক জাতি ও এক সনাতন ধর্মের মানুষ, তাই কেউ বেদের বিরোধীতা
করার কথা কল্পনাও করতে পারতেন না। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে মানুষের মধ্যে মতভেদ
সৃষ্টি হয় ও মানুষ নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়েন। তা আমরা বিশ্বের বিভিন্ন শাস্ত্র গ্রন্থ পাঠ করলেই জানতে
পারি। যারা বেদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের গোষ্ঠীর জন্য পথপ্রদর্শক হন- তাঁরা
বেদকেই কেন্দ্র করে শাস্ত্রগ্রন্থ রচনা করেন। কালের কবলে পড়ে সেগুলি পরবর্তীতে বেদ
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও সেসব শাস্ত্র গ্রন্থে বেদের আলো কিছুটা থেকে যায় – কারণ
সকলেই অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিজের গোষ্ঠীদের নিয়ে যাবার চেষ্টা করতেন। এখনো যেসব
শাস্ত্র গ্রন্থ বিভিন্ন ধর্মের সম্প্রদায়ের নিকট রয়েছে তা বেদকে অনুসরণ করেই রচিত
হয়েছে এবং বেদের সত্যই সেখানে বিভিন্ন রূপে স্থান পেয়েছে। বেদ আর বেদের ভাব, সূর্য
আর সূর্যের আলো যেমন তেমনি ভাবে বেদ বহির্ভূত ধর্মের সৃষ্টি হতে থাকে এক সনাতন
ধর্ম থেকে বের হয়ে গিয়ে। ধীরে ধীরে মানুষ ও মানুষের উপাস্য ঈশ্বর সাম্প্রদায়িক হয়ে
বেদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। বিভিন্ন ভাবধারার জন্ম নিতে শুরু করে অদৃশ্য ঈশ্বরের
সাথে যোগসূত্র স্থাপন করার জন্যে। সারা বিশ্বজুড়ে নিজের ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রচার
শুরু হয়ে যায় হীনভাবকে আশ্রয় করে। মানুষ আর দেবতার মধ্যে যে নিবিড় সম্পর্ক তা
বিশ্বাস- অবিশ্বাসের দোলায় দোল খেতে থাকে। মানুষ সাহস পেয়ে যায় বলতে—ঈশ্বর মৃত—ধর্ম
আফিং এর নেশা। সারা বিশ্বে শুরু হয়ে যায় মানুষে মানুষে রেষারেষি – হানাহানি-
নোংরামি ধর্মকে কেন্দ্র করে সত্য থেকে অনেক দূরে সরে গিয়ে। তাই মানুষকে অসত্যের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে
আনার দায়িত্ব সমস্ত বিবেকবান ও জ্ঞানী –গুণী মানুসের। এই শ্রেণির মানুষরা কোন
সম্প্রদায়ের হন না – তাঁরা কেবল এক ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করেন বেদ যজ্ঞের মাধ্যমে।
জয় বেদ যজ্ঞের জয়।