বেদ যজ্ঞ
সম্মেলনঃ—০৭/ ০৭/ ২০১৬ স্থানঃ—ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ- [ বেদ যজ্ঞের হোতা কে
এবং তিনি কেনো জীবের জীবনকে তাঁর যজ্ঞের সাথে যুক্ত করে দিলেন?]
যখন তাঁর সৃষ্টির
কিছুই ছিল না তখন কিন্তু তিনি ছিলেন। তিনি সৃষ্টি করার ইচ্ছা প্রকাশ মাত্র সৃষ্টি
করলেন। অর্থাৎ সৃষ্টির সবকিছুই তাঁর মধ্যে ছিল অব্যক্ত অবস্থায়, তিনি তা যজ্ঞ
অর্থাৎ শুভ ইচ্ছাশক্তির দ্বারা ব্যক্ত করলেন। তিনি নিজের মধ্যে সকল সৃষ্টিকে ধরে
রাখেন বলেই তার প্রকাশ ঘটাতে পারেন। পিতার দেহের মধ্যে পুত্র থাকেন তাই পিতা
পুত্রের সৃষ্টি করতে পারেন। যদি পুত্রের বীজ পিতার দেহে না থাকে তবে কিছুতেই সেই
সৃষ্টি সম্ভব নয়। যজ্ঞই হচ্ছে সৃষ্টির মূল কারণ। পরম পুরুষ সচ্চিদানন্দ এই বিরাট
বিশ্বযজ্ঞে আপনাকে আত্মাহুতি দিয়ে এই বিশাল সৃষ্টিকর্ম চালু রাখেন যজ্ঞের মাধ্যমে।
অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে তিনি অনুপ্রবেশ করলেন পূর্ণ হয়ে, সকলকে তাঁরই যজ্ঞসাথী করে
রেখে অথচ তিনি পূর্ণই থেকে গেলেন নিজ সত্তায়। তাঁর সৃষ্টিতে কেউ অপূর্ণ থাকলেন না
তা দেখেই তিনি পরিতৃপ্ত হলেন এবং সবায়কে এক সূরে বেঁধে দিলেন। এই বেদ যজ্ঞের হোতা
স্বয়ং সৎ- সত্য- সুন্দর ও জ্যোতির্ময় সত্তা যাকে বেদে হিরণ্যগর্ভ বলা হয়ে থাকে।
সকল যজ্ঞের আদি যজ্ঞ হচ্ছে এই বেদযজ্ঞ বা মানসযজ্ঞ। এই যজ্ঞে কোন উপকরণ লাগে না।
আমাদের শ্বাস- প্রশ্বাসে এই যজ্ঞ চলছে।সমস্ত দৈবী সত্তা নিজ
নিজ দৈবশক্তি নিয়ে তাঁর সৃষ্টিতে অবস্থান করে যজ্ঞ করে চলেছেন এবং এই বিশ্বযজ্ঞকে
প্রাণবন্ত করে ধরে রেখেছেন। গীতাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন—যজ্ঞের সৃষ্টি হয়েছে প্রজা সৃষ্টির সাথে
সাথেই। ‘সহযজ্ঞাঃ প্রজাঃ সৃষ্টা’। ভগবান ও মানুষের মধ্যে চিরশাশ্বত সম্পর্ককে
সুদৃঢ় করে ধরে রাখার জন্য এই বেদযজ্ঞ। ভোগলালসা হচ্ছে অযজ্ঞ। যতক্ষণ মানুষের
অন্তরে ভোগলালাসার মোহ থাকবে ততক্ষণ সে কিছুতেই এই যজ্ঞ রহস্য উপলব্ধি করতে পারবে
না। যজ্ঞ সমাপ্তি হয় আত্মসমর্পণে। তার মৌলিক কারণ, ভগবান এই বিশ্বযজ্ঞে আপনাকে
সমর্পণ করেছেন। ভগবানের আত্মসমর্পণের দ্বারাই যজ্ঞের সৃষ্টি। এজন্য আত্মসমর্পণের
অর্থ নিজেকে একেবারে বিলিয়ে দেওয়া—ভগবান যেভাবে যজ্ঞের মাধ্যমে নিজেকে সবার জন্য
বিলিয়ে দিয়ে সবার হয়ে আছেন। তেমনি মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন নিজের মতো করেই সবার
জন্য। মানুষ যখন সংকীর্ণ আমিত্বের অহংকার সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে পরমাত্মার সাথে
যুক্ত হয়ে থাকার জন্য যজ্ঞ করবে তখনি হবে তার আত্মসমর্পণ। আমি যখন নাই, তখনই আমি
আছি। আমাকে নাই করে দেওয়ার নামই বেদ যজ্ঞ। এই যজ্ঞ হল অনন্ত বিশ্বের নাভি। মাতৃগর্ভে শিশু যেমন
নাভির সাথে যুক্ত থাকে তেমনি আমরা বেদ যজ্ঞের দ্বারাই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মূলের
সাথে নিজেকে যুক্ত রাখতে সমর্থ হই। হরি ওঁ তৎ সৎ।