বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—০৬/ ০৭/ ২০১৬ স্থানঃ ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ-[
বৈদিক যুগের নারী- পুরুষের ন্যায় এক হয়ে
জীবন যুদ্ধ রথে চেপে বেদ যজ্ঞ বা ধর্মযুদ্ধ চালিয়ে যাও তাতেই আবার সনাতন ধর্মের
হিন্দুজাতি জগতে উচ্চস্থান অধিকার করবে।]
বেদ পাঠ করলে আমরা দেখতে পাই বৈদিক
যুগে পুরুষ ও নারীর সমান অধিকার ছিল ধর্ম যুদ্ধের সংগ্রাম মঞ্চে। সকলের জীবন রথের
সারথি ছিলেন এক পরমেশ্বর পরব্রহ্ম—এই বিশ্বাস বৈদিক যুগের পুরুষ-নারীদের জীবনকে এক
সুত্রে বেঁধে রেখেছিল। এই বোধে সদায় জাগ্রত থাকার জন্য কেউ নিজেকে অপর থেকে আলাদা
ভাবতে পারতেন না। ঈশ্বর এক থেকে বহু হবার বাসনা প্রকাশ করে সকলকে সৃষ্টি করে সেই
সৃষ্টির মধ্যে তিনি প্রবেশ করেন এবং তিনিই জীবন রথের সারথি হয়ে তাঁর সৃষ্টিকে
চালিত করেন। এই বিশ্বাস বৈদিক যুগের নারী- পুরুষ উভয়কেই ঈশ্বর বিশ্বাসী যোদ্ধা করে
তোলেন এবং সদায় তাঁদেরকে ধর্মযুদ্ধে রত রাখতেন। বেদের যুগে নারী প্রয়োজন মত এই ধর্ম যুদ্ধে সেনাপতির কাজ করতেন ও জীবন
যুদ্ধে জয়ী হতেন। যুদ্ধে পা কেটে গেলেও নারী লৌহ নির্মিত পা নিয়ে যুদ্ধে উপস্থিত
থাকতেন। নিজে রথ চালিয়েও শত্রুকে পরাজিত করতেন। এই উচ্চতম সভ্যতার যুগে বেদ ছিল
জাতীয় জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ আশ্রয় ও অবলম্বন। বেদ কোন চাষার জীবনের গান নয়। বেদ হলো
মানবজাতির ও জীবের পরম কল্যাণকর মর্মবাণী। বেদের মন্ত্র নারী- পুরুষ সকলকে শুভপথে
আহ্বান করে বলেন—“ সমানী প্রপা সহ বোহন্নভাগঃ সমানে যোক্তে সহ বো যুনজমি।
সম্যঞ্চোহগ্নিং সপর্যতারা নাভিমিবাভিতঃ।।(অ।৩/৩০/৬)”। অর্থাৎ “ এক পান শালাতে
তোমরা পান কর, একত্র সকলে একই অন্ন ভাগ করে খাও, একই স্নেহরজ্জুতে আমি তোমাদের
সকলকে একত্রে বেঁধে রেখেছি। একই লক্ষ্যে সংঘবদ্ধ হয়ে তোমরা সকলে পরম অগ্নি
পরমেশ্বরের সেবা কর, অর বা রথ চক্রের কীলকসকল যেমন তার নাভি বা মধ্যছিদ্রকে বেষ্টন
করে নিজ নিজ কার্য সাধন করে, তোমরাও সেরূপ এক ফলাকাংক্ষী হয়ে নিজ নিজ ব্রতের
সাধনাদ্বারা অগ্নিদেবের (জ্যোতিঃস্বরূপ পরমেশ্বরের) সেবা কর— )”। তবে নিশ্চিত বলা
যায় বেদমাতার আশীর্বাদে এই ভারতবর্ষে এই পতিত হিন্দু জাতি জগতে আবার উচ্চস্থান
অধিকার করবে। সেই সাথে ভারতের সনাতন ধর্মের রথ বিশ্ববাসীকে একসুত্রে আবার গেঁথে
তুলে বলবেন—“ অয়ং নিজঃ পরো বেতি গণনা লঘুচেতসাম। উদারচরিতানাং তু বসুধৈব
কুটুম্বকম”। জয় বেদ যজ্ঞের জয়।