Home » » বেদ যজ্ঞ সম্মেলন-- ২২/ ০৬/ ২০১৬

বেদ যজ্ঞ সম্মেলন-- ২২/ ০৬/ ২০১৬



বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—২২/ ০৬/ ২০১৬  স্থানঃ- ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদ যজ্ঞ  করেই ঈশ্বর মানবজাতি সহ তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকে দিয়ে তিনটি পথ ধরে বা সুত্র মেনে নিজের দিকে সদায় আকর্ষণ করে চলেছেন।]
ঈশ্বর সকলকে তাঁর বেদ যজ্ঞের সাথী করে ধরে রেখেছেন। এই যজ্ঞের সাথী করে ধরে রাখার জন্য তিনি মানুষের অন্তরের শ্রদ্ধা অনুসারে তিনটি সূত্র প্রয়োগ করেন। প্রথম সূত্র- ভীতি প্রদর্শন দ্বারা তিনি এক শ্রেণির মানুষকে বেদ যজ্ঞের আসরে ধরে রাখেন। তাঁদেরকে তিনি নরকের ভয় দেখিয়ে ও স্বর্গভ্রষ্ট হবার ভয় দেখিয়ে এই যজ্ঞে ধরে রাখার ব্যবস্থা করেন ও সৎ কর্মের দিকে আকর্ষণ করেন। যেমন বিদ্যালয়ে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীর লেখা-পড়ার দিকে মন থাকেনা তাদের জন্য গুরুমশাইকে বিভিন্ন প্রকারের ভয় দেখানোর ব্যবস্থা করতে হয়—ঠিক তেমনি ব্যবস্থা করতে হয় ঈশ্বরকে এই শ্রেণির মানুষকে বশে রাখার জন্য। পরীক্ষায় ফেল করার ভয়ে—সামাজিক মান- মর্যাদার ভয়ে যেমন এই শ্রেণির ছাত্র- ছাত্রীরা বিভিন্ন অনৈতিক পথ অবলম্বন করে পাশ করার জন্যে মরিয়া হয়ে যায় – তেমনি স্বর্গ – নরক- পরকালের ভয়ে এই শ্রেণির মানুষরা বিভিন্ন কাজ করেন ঈশ্বরকে সামনে রেখে এবং সেই কর্মফল তাঁরাই ভোগ করেন ইহলোকে ও পরলোকে।   মানুষের মধ্যে ঈশ্বর- স্বর্গ –নরক- পরকাল ইত্যাদির ভয়ে কর্মযজ্ঞ বা বেদযজ্ঞ করার প্রেরণা অতীব নিম্নস্তরের সাধনা – এক কথায় তৃতীয় শ্রেণির মানুষের জন্য এটা প্রচলিত ধারণা বা বিশ্বাস মাত্র। এই ভীতির আবেদন জৈব, প্রায়শঃ দেহ- দৈহিকে বা মনের নিম্নস্তরে সীমাবদ্ধই থেকে যায়। আধ্যাত্মিক মার্গের জীবনলাভ এদের ভাগ্যে জুটে না – নিজেদেরকে অমৃতের সন্তানরূপেও জানার সৌভাগ্য তাদের হয় না। এই পথ ভুক্তিমুখী পথ—পার্থিব জগতের কামনা- বাসনা- চাহিদার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
দ্বিতীয় পথ নীতি বা সৎ পথে মানুষকে সৎ উপদেশ দিয়ে বেদযজ্ঞ বা ধর্মযুদ্ধে ধরে রাখার ব্যবস্থা করা। মানুষের মন যখন অস্থির হয়ে যায় এই পার্থিব জগতের মোহে তখন এই নীতির পথ খুব কার্যকরী হয় তাদের জীবনে। ঈশ্বর এই নীতির পথেও মানুষকে আকর্ষণ করে চলেছেন এবং নিজের আশ্রয়ে ধরে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। এই শাস্ত্রোপদেশের পথ ভীতি প্রদর্শনের পথ থেকে উত্তম। এই নীতির পথ ধরে মানুষকে ধর্ম উপদেশ দেওয়ার জন্য সৃষ্টি হয়েছে – গুরু- শিষ্যের পদ। শিষ্যের হৃদয়ে গুরুর প্রতি যত শ্রদ্ধা- ভক্তি- বিশ্বাস জন্মাবে ততই সে ঈশ্বর লাভের পথে এগিয়ে যাবে। নীতির আবেদন বা আকর্ষণ মানবীয়, চিত্তের উচ্চতর স্তরে এর অভিব্যক্তি। এই পথকে মুক্তমুখী পথও বলা যেতে পারে। পার্থিব জগতের চাহিদা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে অমৃতের সন্তানরূপে জানার সাধনায় লিপ্ত থাকা ও ঊর্ধ্বমুখী চিন্তা ও চিত্ত নিয়ে থাকার প্রতি আকর্ষণ-- এই পথের মানুষকে উজ্জ্বল করে সর্বদিকে।
তৃতীয় পথ হলো প্রীতি বা প্রেমের পথ। ভগবান সর্বভূতে বিরাজ করছেন এই সত্যকে জেনে তাঁকে প্রেম নিবেদন করা এবং তাঁর হাতে নিজেকে সমর্পণ করে তাঁর সাথে একাত্ম হয়ে থাকা--- এই পথের জন্য ঈশ্বরের যে আকর্ষণ এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ। প্রীতির আবেদন আত্মিক, নিখিল আত্মচৈতন্য ভূমিতে এর পরিব্যাপ্তি ও পরিপূর্ণতা প্রাপ্তি। প্রিয়ত্ব আত্মার নিত্যধর্ম। এই নিত্য ধর্ম অবলম্বনে আত্মার দ্বারা যে বেদযজ্ঞের প্রেরণা তাই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ পথ ও সবার কল্যাণমুখী পথ। ঈশ্বরের প্রেমমধুর আকর্ষণের বংশীধ্বনি সবার কানে পৌঁছায় না অথচ তিনি সবায়কেই সেই ধ্বনি শোনার জন্য কান দিয়েছেন। বহিরাকাশের সূর্যকে সবায় দেখতে পায় কিন্তু অন্তরাকাশের সূর্যকে দেখার সৌভাগ্য সবার হয় না। এই অন্তরাকাশের সূর্যই হলেন বেদ—এই সূর্যই বহিরাকাশের সূর্যকেও আলোদান করে আলোকিত করে রেখেছেন। তাই বেদযজ্ঞ করেই বেদ সূর্যের আলোতে সূর্য যেমন আলোকিত হয়ে আছেন তেমনি মানুষের সেই ক্ষমতা আছে বেদযজ্ঞ করে নিজের জীবনকে আলোকিত করে ধরে রাখার।  হরি ওঁ তৎ সৎ।

Facebook CommentsShowHide
Disqus CommentsLoadHide