Home » » বেদ যজ্ঞ সম্মেলন-- ২৩/ ০৬/ ২০১৬

বেদ যজ্ঞ সম্মেলন-- ২৩/ ০৬/ ২০১৬



বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ--- ২৩/ ০৬/ ২০১৬ স্থানঃ—ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ [ বেদ যজ্ঞ করে তোমরা নিজের যজ্ঞদৃষ্টি, দিব্যদৃষ্টি ও আত্মিকদৃষ্টির দ্বার খুলে পরমসত্তার সাথে এক হয়ে আনন্দলোকে বিরাজ করার জন্য এগিয়ে চলো।]
বেদ যজ্ঞ না করলে যজ্ঞদৃষ্টি শক্তি কেউ ঈশ্বরের নিকট থেকে পেতে পারেন না। যজ্ঞদৃষ্টি না পেলে এই বিশ্বজগতে ঈশ্বরের এক বিরাট যজ্ঞ চলছে তা কেউ দেখতে পাবেন না ও দেখতে না পেলে তাঁর প্রতি বিশ্বাস ও প্রেম অন্তরে জাগতেও পারেনা। তাঁর প্রতি প্রেম ও বিশ্বাস অন্তরে না থাকলে কোন মানুষ বিশ্বাসী হতে পারেন না। বিশ্বাসঘাতকদের অন্তরে কখনো নির্মল জ্ঞানের স্রোত প্রবাহিত হতে পারে না। ঈশ্বর যাকে যজ্ঞদৃষ্টি দেন-- তিনিই কেবল দেখতে পান --মূল বীজপ্রদ পিতা হচ্ছেন একমাত্র অমৃতময় ঈশ্বর। এই বিশ্বের সব নরনারী একই পিতার বীজ থেকে উৎপন্ন-- তাই সকলেই আমরা ভাই- বোনের সম্পর্ক নিয়ে রয়েছি। এটা কোন ভাবের কথা নয়--- এটাই চিরন্তন সত্যএকটা বীজ থেকে অঙ্কুর হয়, অঙ্কুর বৃক্ষে রূপায়িত হয়, এই প্রক্রিয়া হচ্ছে একটি যজ্ঞ।  এই যজ্ঞের কর্তা শ্রীভগবান। ফুল হতে ফল হয়, ফলের মধ্যে বৃক্ষের মূল বীজটি পাওয়া যায়,এই ধারাবাহিকতা একটি যজ্ঞ। সারা বিশ্বে সমস্ত কর্ম স্বাভাবিকভাবে হয়ে চলেছে সবই এই বিরাট যজ্ঞের অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ। এই যজ্ঞ বন্ধ হলেই মহাপ্রলয় ঘটে যাবে মুহূর্তের মধ্যে। এই বিরাট যজ্ঞকে জ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখাই হচ্ছে যজ্ঞদৃষ্টি। গভীরভাবে বেদে প্রবেশ করলেই যজ্ঞদৃষ্টি লাভ করা যায়।
বিশ্বব্যাপী যা কিছু দেখা যাচ্ছে তা সকলই এক বেদের প্রকাশময় রূপ। বেদ অর্থ জ্ঞান, বেদ হচ্ছে নিখিল জ্ঞানভাণ্ডার। এখানে বিশ্বদেবতার প্রকাশ ঘটেছে—একটি দেবতা লক্ষ কোটি রূপে অসংখ্য সৌন্দর্য, মাধুর্য, লাবণ্যের পসরা নিয়ে নিজেকে প্রকাশ করেছেন। এগুলো চোখ খুলে দর্শন করা যায়। আর চোখ বন্ধ করলে আমাদের ভিতরে দেখতে পাই এক অন্য রাজ্য—কত স্নেহ- প্রেম- প্রীতি, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুরভাবের সমারোহ ঘটে চলেছে এবং কতই না অনুরাগ, আকর্ষণ,বৈরাগ্য, করুণার চিত্ত চমৎকারী প্রকাশ ঘটে চলেছে। এই অন্তর রাজ্যেই ভুমার আত্মপ্রকাশ ঘটে অন্তর- বাহির সবকে এক বৃন্তে ধরে রেখে। ভুমার বৈদিক নাম ‘বৃহৎ’। এই বৃহৎ চক্ষু নিয়ে ঈশ্বরের জগতকে জানা – অনুভব করা- দেখাই হলো দৈবদৃষ্টি। বেদশাস্ত্র আমাদের অন্তরেই রয়েছে—তাই অনুকুল পরিবেশ পেলেই তা খুলে যায়। কাঠে আগুন আছে তাই আগুনের স্পর্শ পেলেই তা জ্বলে উঠে—তেমনি সবার অন্তরে ঈশ্বর বেদশাস্ত্র নিয়েই রয়েছেন- সামান্য একটু বেদ যজ্ঞ অগ্নির স্পর্শে তা প্রচণ্ড শিখা নিয়ে নিজের গতিতে জ্বলে উঠেন।
ভেজা কাঠে অতিরিক্ত পরিমান জলীয় বাস্প থাকায়,তাতে আগুন থাকলেও তা আগুনের স্পর্শ পাবার সাথে সাথে জ্বলে উঠে না—তেমনি মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের অবস্থান থাকলেও কামনা- বাসনা- চাহিদার পরিমান এতো বেশী পরিমানে থাকে যে সেখানে কিছুতেই তিনি জেগে উঠার অনুকুল পরিবেশ পান না। দক্ষ কন্যা উমা শিবকে লাভ করার জন্য কঠোর তপস্যা শুরু করলেনগাছের যে পাতাগুলি আপনা আপনি খসে পড়ে, কেবল তার রস পান করে জীবনধারণ করাই হলো তপস্যার চরম উৎকর্ষ, সর্বাপেক্ষা কঠোর সাধনা। উমা কিন্তু শিবকে লাভ করার জন্য তাও গ্রহণ করতেন না – এমনকি সেগুলি স্পর্শ পর্যন্ত করতেন না। সেই জন্যই তাঁর নাম হয় অপর্ণা। এরূপ কঠোর ত্যাগ ও সংযমে উমার দেহখানি সম্পূর্ণ শুষ্ক হয়ে গেছে এবং নিরন্তর ‘শিব শিব’ জপ করতে করতে তাঁর দেহ- ইন্দ্রিয় শিবময় হয়ে গিয়েছিল। শিবত্ব ছিল দেহের মধ্যেই, অনুকূল পরিবেশে তা জাগ্রত হল। এই নিজের মধ্যে ঈশ্বরকে দর্শন করে আত্মার তুষ্টিসাধন এটাই হচ্ছে আত্মিকদৃষ্টি।
এই তিন দৃষ্টিই ঈশ্বরের দান—এই তিন দৃষ্টি যার মধ্যে মিলিত হয়ে একত্ব প্রাপ্ত হয়েছে তিনিই বেদজ্ঞানী। তিনিই বেদের যথার্থ অর্থ উপলদ্ধি করতে পারেন ঈশ্বরের কৃপা লাভ করে। জয় বেদ ভগবানের জয়।

Facebook CommentsShowHide
Disqus CommentsLoadHide