[ বেদ যজ্ঞ করেই তোমাদের জেনে
নিতে হবে যা আছে তাকে ত্যাগ করা যায় না, যা নেই তাকে গ্রহণ করা যায় না।]
এক ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ নেই। তাহলে তাঁকে
ত্যাগ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁকে ঘিরে যে জগৎ সংসার তা আজ আছে—কাল নেই – তবে
তাকে গ্রহণ করা যায় না। কিন্তু এই মায়া মোহময় সংসারে উল্টো চিত্র আমরা দেখতে পাই।
আমরা যা আছে তাকে গ্রহণ না করে, যা নেই তার পিছনে ছুটি তাকেই আঁকড়ে ধরে বেঁচে
থাকার জন্যে। তাই দেখা যায় সেই সম্পদগুলি আমাদের হাতছাড়া হলেই দুঃখের সাগরে পতিত
হই। ঈশ্বরকে আঁকড়ে ধরে সবকিছু করা যায় কিন্তু তাঁকে বাদ দিয়ে বা ফাঁকি দিয়ে কোনো
সুত্রই পাওয়া যায় না। ঈশ্বরকে ঘিরে বিভিন্ন ধর্মমতের সৃষ্টি হয়—কিন্তু তাঁকে বাদ
দিয়ে কোনো ধর্মমতের অস্তিত্ব থাকে না। ঈশ্বরকে ঘিরেই পার্থিব জগৎ-- তাই তাঁকে বাদ
দিয়ে পার্থিব জগতের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। যা আজ আছে, কাল নেই তাকে নিয়েই আমরা
বেশি মাথা ব্যাথা করি। যা আছে- যা ছিল- যা থাকবে তাকে নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা
নেই। তোমরা আছো—তোমরা ছিলে—তোমরা থাকবে এই চিরন্তন সত্যকে জেনে কেনো গবেষণা করছো
না? যখন এই আত্মজ্ঞান নিয়ে গবেষণা চালাবে তখন দেখবে এক সত্য ছাড়া দ্বিতীয় সত্য
নেই। যা কিছু সৃষ্টি সব এক সত্যকে কেন্দ্র করে। সেই সত্য হচ্ছে এক ঈশ্বর ছাড়া
দ্বিতীয় কেউ নেই – তাই তাঁকেই ঘিরেই জীবনের ধর্ম ও কর্ম। জীবনকে ঘিরে মায়া- মোহময়
অনিত্য সংসার। এই অনিত্য সংসারের প্রকাশ আছে আবার ধ্বংস আছে। এই সংসারকে ঘিরে
জীবনের সৃষ্টি আছে আবার ধ্বংস আছে। জীবনকে ধরে রাখার জন্যে ধর্ম ও কর্মের সৃষ্টি
আছে আবার ধ্বংস আছে। তাই এগুলো কোনটাই চিরস্থায়ী নয়। কালের কবলে প্রকাশ হয় আবার
বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু তুমি যাকে ধরে জীবন পেয়েছো – সে ছিল- সে আছে- সে থাকবে
তোমাকে ঘিরে। সেই একমাত্র কালজয়ী অবিনাশী সৃষ্টি কর্তা। যার জন্মও নাই- মৃত্যুও
নাই। যে সৎ- সত্য- সুন্দর ও জ্যোতির্ময় হয়ে সৃষ্টি –স্থিতি- লয়ের দ্বারা যুগ-যুগ
ধরে নিজের প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছেন নিজের জ্ঞান- বিজ্ঞানের ঘরে সিংহাসনে বসে থেকে।
একমাত্র তিনিই বেদ যজ্ঞের মাধ্যমে নিজের বিজ্ঞান দ্বারা জগৎ -সংসারকে পরিচালনা
করছেন ও সকলকে নিজের বেদ যজ্ঞের সাথে যুক্ত করে রেখেছেন এক অভিনব পদ্ধতিতে। মানুষ
বুদ্ধিমান জীব হয়ে যখনি তাঁর বেদ যজ্ঞের সাথী হয়ে যাবেন তখনি তিনি তাঁর বেদ যজ্ঞের
ভার তাঁর উপর অর্পণ করবেন। পিতা যেমন উপযুক্ত সন্তানের হাতে তাঁর কর্মের ভার অর্পণ
করে তাঁকে নিজের সংসারে ধরে রাখেন—তেমনি ঈশ্বর তাঁর ভক্ত- সন্তানের উপর দায়িত্ব
ভার অর্পণ করে তাঁকে তাঁর প্রেমের ছায়া তলে ধারণ করে রাখেন। এই ঈশ্বর প্রেম এটাই
সত্য একেই কেবল ধরে রাখা যায় বাকী সব অনিত্য। ওঁ তৎ সৎ।