বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—০১/ ০৯/ ২০১৬ স্থানঃ—ঘোড়শালা*
মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদ যজ্ঞ করে সদায় আচার্যের উপদেশ শিরোধার্য করে- অন্তরে ধরে রাখবে, তাহলেই সর্বত্র তোমার জয় হবে।]
প্রতিদিন বৈদিক শিষ্য হয়ে বেদ যজ্ঞ আরম্ভ
করার সময় প্রার্থনা করবে—‘ ব্রহ্ম আমাদের উভয়কেই রক্ষা করুন। তিনি আমাদের একত্রে
বহন করুন। আমরা একত্রে জ্ঞান লাভের শক্তি যেন অর্জন করি। আমাদের শিক্ষা যেন তার
প্রকৃত বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে পারে—শিক্ষা যেন আলোর মত সুদীপ্ত হয়ে উঠে—প্রাণবন্ত
হয়ে থাকে। আমাদের মধ্যে যেন কোন বিদ্বেষের সৃষ্টি না হয়’। বেদের যুগে ঋষিরা
শিষ্যদের শিক্ষা শেষে যে উপদেশ দিতেন তা বর্তমান যুগের ছাত্র/ ছাত্রীদের জন্য একান্ত প্রয়োজন, তা-না-হলে
বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কেবল ইটপাথরের তৈরী ইমারৎ রূপেই গণ্য হবে – সেখান থেকে একটাও মানুষ
বের হয়ে আসবে না।
সর্বযুগের সর্বকালের মানুষের মানবিক- আধ্যাত্মিক- নৈতিক- সামাজিক- অর্থনৈতিক ও
রাজনৈতিক দিককে ফুটিয়ে তোলার জন্য যে
শিক্ষা অমর হয়ে আছে তার উল্লেখ করতেই হয়-- “ তুমি সর্বদা সত্য বলবে, ধর্ম্যাচারণ করবে, ভুল করেও জীবনে কোনদিন
অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা ত্যাগ করবে না। পূর্ণ ব্রহ্মচর্য দ্বারা সমস্ত বিদ্যাশিক্ষা লাভ
করবে এবং আচার্যকে তাঁর প্রিয়ধন প্রদান করবে। যথা সময়ে বিয়ে করে সন্তানের পিতা-
মাতার আসন অলংকৃত করবে। ভুল করেও জীবনে কখনও সত্য ত্যাগ করবে না। ভুল করেও কখনও
ধর্ম ত্যাগ করবে না। ভুলপথে গিয়ে ভুল করেও কোন সময়ের জন্য নিজের আরোগ্য ও
নিপুণতাকে বিসর্জন দিও না। ভুল করেও জীবনে কোনদিন উৎকৃষ্ট ঐশ্বর্য বৃদ্ধির পথ
পরিত্যাগ করিও না।
দেব অর্থাৎ বিদ্বান এবং পিতা- মাতা- গুরুজন প্রভৃতির সেবা থেকে কখনও নিজেকে সরিয়ে
রাখবে না। যেরূপ নিজের দেবতুল্য পিতা- মাতা- বিদ্বান- গুরু- আত্মীয়স্বজন- অতিথির
সেবা করবে অন্তর জগতের শ্রদ্ধা- বাইরের জগতের সম্পদ ও ভৌতিক জগতের উপদ্রবকে
নিরোধের ব্যবস্থা করে, তেমনি বন্ধুদেরও সেই শিক্ষার আলোতে আলোকিত করবে সুদৃঢ়
জ্ঞানী মানব সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে। সত্যভাষণ সহজ- সরল ভাষা ও ভাবভঙ্গী সহযোগে
পরিবেশন করবে সকলকে আনন্দময় পরিবেশে ধরে রাখার জন্য। লাভের কথা চিন্তা করে বা
সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কখনো মিথ্যা ভাষণের ধারে- কাছেও যাবে না।
একবার মিথ্যা ভাষণ দিয়ে যদি লাভ হয়ে যায় তবে প্রতিনিয়ত লোভ বৃদ্ধি হতে থাকবে। তাই
সুচরিত্র গঠনের লক্ষ্যে সদায় ধর্মাচরণ করে ন্যায়সঙ্গত ভাবে সনাতন ধর্মকে সংরক্ষিত
রাখার ভুমিকায় অবস্থান করতে হবে। পাপাচরণ থেকে নিজের জ্ঞান- বুদ্ধি বলে বিরত থাকতে
হবে। সমাজের বুকে যারা বিদ্বান- যারা ধর্মাত্মা তাঁদের সান্নিধ্যে থেকে তাঁদের
অনুসরণ ও অনুকরণ করে নিজেকে উজ্জ্বল নক্ষত্র রূপে গড়ে তুলতে হবে বেদ যজ্ঞের
মাধ্যমে। নিজের জীবন উৎসর্গ করার থেকে বড় দান আর দ্বিতীয় হতে পারে না, এই দান করবে
শ্রদ্ধা- ভক্তি- লজ্জা- ভয়- প্রতিজ্ঞা ও শোভনতার সাথে সবার মঙ্গলের জন্য দধীচি
মুনির আদর্শে। এই সব কর্ম করতে গিয়ে যখন যখন মনে সংশয় আসবে, তখন বিচারশীল,
পক্ষপাতশূন্য, যোগী, অযোগী কোমলচিত্ত ধর্মাত্মাদের সান্নিধ্যে গিয়ে সৎ আলোচনায়
অংশগ্রহণ করবে। এই শিক্ষাকে আশ্রয় করে জীবন পথে এগিয়ে যাবে নিজের অন্তরের ওঁব্রহ্ম
বেদ যন্ত্রকে খুলে দেবার জন্য। এই যন্ত্রই সকলের অন্তর জগত, বহির্জগত ও ভৌতিক
জগতের কর্তা হয়ে কর্ম করে চলেছে। তাই এই শিক্ষার মাধ্যমেই তোমরা ওঁব্রহ্ম বেদ
যন্ত্রকে সঠিক পথে – শুভপথে চালনা করার কৌশল শিখে নাও সদায় বেদ যজ্ঞের আসরে থেকে।
জয় বেদ যজ্ঞের জয়।