বেদ যজ্ঞ
সম্মেলনঃ—০৩/ ০৮/ ২০১৬ স্থানঃ—ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বৈদিক যজ্ঞের ব্যাপারে
নারীর কি স্থান বা ভুমিকা ছিল তা নিয়ে আলোচনা করে ভারতীয় নারীদের বেদ যজ্ঞে আহ্বান
জানাও।]
ঈশ্বর এই বিশ্ব-
জগৎ সৃষ্টি করেছেন নারী ও পুরুষের শক্তির দ্বারা। সৃষ্টির চরিতার্থতা ও পূর্ণতা,
নারী ও পুরুষের সুনির্দিষ্ট ভুমিকা পালনের উপর নির্ভরশীল। বৈদিক যজ্ঞে বা বেদ যজ্ঞে নারীদের ভূমিকা কি ছিল তা
সকলের জানা প্রয়োজন। ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নারীসমাজ মর্যাদার
উচ্চশিখরে অধিষ্ঠিত ছিল। বৈদিকশাস্ত্র পর্যালোচনা করলে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
বৈদিকভাবনায় স্ত্রী-পুরুষের বিবাহবন্ধনকে অতি পবিত্র মিলনরূপে গণ্য করা হয়।
পুরুষের জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যায় স্ত্রীর সাহচর্য ব্যতিরেকে। শতপথ ব্রাহ্মণের
ঘোষণা – স্ত্রী হলেন স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী, স্ত্রীলাভেই পুরুষের জীবন পরিপূর্ণতা
প্রাপ্ত হয়। সুতরাং সমাজে নারী ও পুরুষ সমান মর্যাদাসম্পন্ন, সমান গুরুত্বপূর্ণ।
স্ত্রী ব্যতিরেকে বেদ যজ্ঞ সম্ভব নয়। পত্নীহীনের যজ্ঞে আহুতি ভগবান গ্রহণ করেন না।
পত্নী শব্দের অর্থ পালয়িত্রী, যিনি যজ্ঞক্রিয়ায় স্বামীকে সাহায্য করেন। তাই বেদে
স্বামী- স্ত্রীর মধুর সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলা হয়েছে—সত্যই পুরুষ, বিশ্বাসই নারী, মনই
স্বামী, স্ত্রী বাকশক্তি; যেখানে স্বামী, সেখানেই স্ত্রী। সত্য ও বিশ্বাস যেমন একই
সঙ্গে চলে, মন এবং বাকশক্তি যেমন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, ঠিক একইভাবে স্বামী- স্ত্রীর
সম্পর্কও অবিচ্ছেদ্য। এই সম্পর্ক শুধুমাত্র জাগতিক নহে, ইহার বহু ঊর্ধ্বে
প্রতিষ্ঠিত। বৈদিক যুগে নারীরা বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করতেন—বৈদিক মন্ত্রের
স্রষ্টাও ছিলেন। তাঁরা নিত্য বেদ পাঠও করতেন। এই যুগে নারীরা দেবীর আসনে অধিষ্ঠাতা
ছিলেন। তাঁরা উচ্চ শিক্ষিতা ছিলেন; ছিলেন সর্বগুণে গুণাম্বিতা, ছিলেন মর্যাদা
সম্পন্না। এই যুগের উচ্চশিক্ষিতা বেদজ্ঞ নারীর তালিকা বিশাল—তাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ
ছিলেন গার্গী, মৈত্রিয়ী, বিশ্ববারা, লোপামুদ্রা, অপালা, ঘোষা, গোধা, জুহু, অদিতি,
ইন্দ্রাণী, সরমা, সোমশা , উর্বশী, যমী, শাশ্বতী, শ্রী, লাক্ষা, বাচ, শ্রদ্ধা,
মেধা, দক্ষিণা, রাত্রী, সূর্যা, সাবিত্রী, গায়িত্রী ইত্যাদি নাম বিখ্যাত হয়ে আছে।
আজ দুঃখের বিষয় আমাদেরকে বিদেশীদের কাছে শুনতে হয় যে ভারতে নারীদের শিক্ষার কোন
ব্যবস্থা ছিল না – হিন্দুরা নারীদেরকে পন্য করে রাখতেন ইত্যাদি। তাই আর দেরী নয়—আর
দলাদলি নয়—কিহবে মঠ –মন্দির- আশ্রমের কাঠামো তৈরী করে – যদি সনাতন ধর্মের মূল বেদ
না থাকে তবে সেসবের কোনটার অস্তিত্ব থাকবে না। সব বিদেশীদের হাতে গিয়ে নিজেদের
মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছে আবার ফেলবে এতে কোন ভুল নেই। বেদ বাঁচলে সনাতন ধর্ম –
হিন্দুধর্ম – বৈষ্ণব ধর্ম – জৈন ধর্ম – বৌদ্ধধর্ম এবং তাঁদের মঠ- মন্দির- গুহা-
সন্ন্যাসী- পুরোহিত সকলেই বাঁচবে – তানাহলে সবাই সেই ঐক্যের অভাবে একে একে চোখের
সামনে সন্ত্রাসের কবলে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। কেউ কাউকে বাঁচাতে যাবে না ও বাঁচাতে
পারবে না। জয় বেদ যজ্ঞের জয়।