বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—১১/ ০৮/ ২০১৬ স্থানঃ
ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃবঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদ যজ্ঞের মাধ্যমে সকল প্রকার স্বার্থ-ভাবনা ও
আত্ম-কেন্দ্রিক প্রয়াসের ঊর্ধ্বে উঠে কেবল বিশ্বের সর্বমানবের সুখ- শান্তি-
আনন্দলাভের পথ প্রদর্শন করে যাও।]
ভারতীয় দর্শন কেবল বিশ্বমানবের মধ্যে
ঈশ্বরকে দর্শনের কথা বলেই থেমে থাকেন নি। গীতাতে বলা হয়েছে-- বিদ্যা- বিনয়যুক্ত
ব্রাহ্মণ, চণ্ডাল, গরু, হাতি ও কুকুরে যিনি সমদর্শী, তিনিই আত্মতত্ত্ববিৎ। ভারতীয়
দর্শন মানুষ তো অনেক দূরের কথা, কোন প্রাণীকেও ঘৃণা করতে শিখায় না, সেক্ষেত্রে ভারতের
বাইরে সৃষ্ট দর্শন অদ্ভুত পদ্ধতিতে মানুষকে হত্যা করতে- মানুষের উপর নির্যাতন
চালাতে- নারীদের ধর্ষণ করে হত্যা করতে শিক্ষা দেয়। অন্যান্য পশুদের হত্যা করা ও
তাদের উপর নির্যাতন করার প্রতি তো কোন বাধা- নিষেধের প্রশ্নই উঠে না। তাই ভারতীয়
সনাতন ধর্ম ও ভারতীয় শিক্ষা- সংস্কৃতির সাথে বিশ্বের অন্য কোন ধর্ম ও শিক্ষা
সংস্কৃতির মেল- বন্ধন হওয়া সম্ভব নয়। ভারতীয় দর্শনে যে আত্ম- পরে সামান্যমাত্রই
ভেদ দর্শন করে, তার ভিন্নদর্শী হবার কারণে ঈশ্বর দর্শন তো দূরে থাক, তার কোথাও
স্থান হয় না। সেক্ষেত্রে বিদেশী ধর্মের ঈশ্বর নিজের জাতি ছাড়া অন্য ধর্ম ও জাতির
মানুষকে নানাভাবে নির্যাতন করার উৎসাহ দিয়ে থাকে ধর্মযুদ্ধের নামে। আর ভারতের
ঈশ্বর বলেন—“ যে আত্ম-পরে সামান্যমাত্রই ভেদ দর্শন করে,আমি মৃত্যুরূপ হয়ে সেই
ভিন্নদর্শী ব্যক্তির ঘোরতর ভয় বিধান করে থাকি। এই কারণে মানুষমাত্রেরই অবশ্য কর্তব্য
আমাকে সর্বপ্রকার প্রাণীর অন্তর্যামী ও সর্বভূতে অবস্থিত জেনে দান মান মৈত্রী ও
সমদর্শিতা দ্বারা সকলকে অর্চনা করা”। ভারতীয় মুনি- ঋষিরা ঈশ্বরের নির্দেশ মান্য
করে সকল স্বার্থ- ভাবনা ও আত্মকেন্দ্রিক প্রয়াসের ঊর্ধ্বে উঠে বিশ্বমানবের সুখ
শান্তি আনন্দলাভের পথ খুঁজে বের করতেন। এই ঋষিরা ধনী, ভোগী, প্রতাপশালী রাজা- উজীর
ছিলেন না কিন্তু তাঁরা ছিলেন ধীর- স্থির –যুক্তাত্মা। পরমাত্মার সাথে যোগে সকলের
সাথে যোগ উপলব্ধি করা, সকলের মধ্যে প্রবেশ লাভ করা, এই দর্শন ভারতের মাটিকে
বিশ্বমানবের শ্রেষ্ঠ তীর্থভূমিতে পরিণত করে রেখেছিল। ভারতের বাইরে থেকে মানুষ
তীর্থ করতে এই ভূমিতে এসে যে সামান্য শিক্ষা লাভ করেছিল, সেই সামান্য শিক্ষার প্রতিফলন ঘটতে থাকে বাইরের জগতের দর্শনে। নদী
যদি সাগরকে গ্রাস করতে যায় তবে কি নদীর কোন অস্তিত্ব থাকবে? তাই সাগর হয়ে কেউ নদী
হতে যেও না – সাগর হয়েই বেদ যজ্ঞ করে চলো বিশ্বমানবের সুখ- শান্তি – আনন্দলাভের পথ
ধরে। জয় বেদ যজ্ঞের জয়।