বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—০৪/ ০৭/ ২০১৬
স্থানঃ-ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃবঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[
বেদ যজ্ঞ করেই বেদের দেবতা ত্বষ্টাকে সন্তুষ্ট করে তক্ষণ করতে শিখো তাহলে তুমিও
বেদবিজ্ঞ হয়ে যাবে।]
ত্বষ্টা হলেন বেদের দেবতা। ত্বষ্টার কাজ হচ্ছে রূপহীন উপাদান থেকে রূপ তৈরী
করা। অব্যক্তকে ব্যক্ত করা, অব্যাকৃতকে ব্যাকৃত করা। তক্ষণ করাকে বাংলায় বলে
‘কুঁদে বের করা’। মানুষের অন্তর ও বাইরে ত্বষ্টার যজ্ঞ চলছে। তিনিই মানুষকে
প্রেরণা দিয়ে চলেছেন অন্তরের বেদকে সুন্দর রূপ দিয়ে তৈরী করার জন্য। বেদ হচ্ছেন
সবার অন্তরের দেবতা, তাকে তক্ষণ করে রূপ দিয়ে বের করতে হবে। তা না হলে তো কেউ
বেদের রূপ দেখতে পাবেন না ও সত্যকে দর্শন করতে পারবেন না। ত্বষ্টা পরমেশ্বর ও
সুদক্ষ শিল্পী হয়ে সকলকে এই কাজে আহ্বান করছেন। তিনি যেমন বেদ যজ্ঞ করে দেবতাদের
অস্ত্র- শস্ত্র- যানবাহন তৈরী করে দেন, তেমনি মানুষদের জন্যেও সব ব্যবস্থা করেন।
তাই বেদের মন্ত্রে বলা হয়েছে—“ তুমি ত্বষ্টা দেবতাকে পূজা কর; কারণ তোমার মত কেউ
যজ্ঞ করতে পারেনা। তুমি বিজ্ঞ”। তাহলে মানব জাতির ন্যায় বিজ্ঞ কেউ নেই আর তাঁদের
ন্যায় অন্য কেউ যজ্ঞেও পারদর্শী নেই। মানুষের মধ্যেই সব সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে।
মানুষই পারে বেদ যজ্ঞের মাধ্যমে তক্ষণ করে নিজের দেবত্ব রূপকে ফুটিয়ে তুলতে। ত্বষ্টা যে সৃষ্টি করেন, তা কোন উপাদান দিয়ে নয়।
তিনি নিজেই হয়ে যান। তাই তিনি বিশ্বরূপ। জগতের যা কিছু অপ্রকাশ অব্যক্ত, তার
রূপকৃৎ গঠনকৃৎ হলেন ত্বষ্টা। ত্বষ্টা হলেন বিশ্বরূপ। বিশ্বরূপ আর বিশ্বকর্মার
মধ্যে পার্থক্য কি? ত্বষ্টা সব হয়েছেন। বিশ্বকর্মা সব করেছেন। তাই বেদ যজ্ঞের
মাধ্যমে উপরের চেতনা তথা সত্যধর্মকে নীচে নামিয়ে এনে তাঁকে তক্ষণ করে রূপ দিতে হয়।
এই সত্য ধর্মকে রূপ দিতে গিয়ে কঠিন কঠিন বাধারও সম্মুখীন হতে হয় সাধককে। এই বাধা
কাটিয়ে যখন সাধক পুরুষ ও প্রকৃতির দিব্যরূপের একত্ব বিশ্বরূপের মধ্যে নিজেকে দেখতে
পায় তখনি সে বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী হয়ে নিজের বিশ্বকর্মা রূপ দেখে দিব্যজীবনের
আলোতে পূর্ণ হয়ে উঠে—সেই সাথে দেবত্বের প্রতিষ্ঠা ও সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে ধন্য হয়।
অগস্ত্য ঋষির পত্নী লোপামুদ্রা দীর্ঘ সাধনার পর সত্যধর্মকে নীচে নামিয়ে আনতে না
পারায় ও ইতি মধ্যে জরা চলে আসায় হতাশ হয়ে পড়েন। তখন অগস্ত্য মুনি তাঁকে সান্ত্বনা
দিয়ে বলেন—কোন সাধনাই বৃথা নয়। জরাকে জয় করে মনে স্থান না দিয়ে বিরুদ্ধশক্তিকে জয়
করতে হবে অখণ্ড পুরুষ –প্রকৃতির সমন্বয়ে। চির শুভ্র, চির নির্মল দিব্যসত্তাকে
আশ্রয় করে নিজেকে রসাপ্লুত করে তোলার সাধনা কর – দেখো তুমি নিজেকে সেই রূপেই তৈরী
করে নিতে পারবে। কামনার গ্রন্থি কেটে ফেলে এগিয়ে চলো সেই সত্যপুরুষের আনন্দশক্তির
মধ্যে—তাহলেই নিজেকে নবজীবনের, সিদ্ধজীবনের মন্ত্রে ও দিব্যজীবনের আলোতে স্থির
রাখতে পারবে। দেবত্বের স্তরে উন্নীত হয়ে, শ্রেয় জীবনের অধিকারী হয়েই পরম কল্যাণময়
সত্যবস্তু লাভ করতে হয়। এই সত্যবস্তু কামনার বশবর্তী হয়ে আশু ফললাভের আশা করে কেউ
লাভ করতে পারেন না। জয় বেদ যজ্ঞের জয়।