বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ- ০৩/ ০৭/ ২০১৬ স্থানঃ –ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[
বেদ যজ্ঞ করে তোমরা অগ্নিবিদ্যা শিখে নাও তাহলেই জন্মমৃত্যু অতিক্রম করে অমরত্ব
লাভ করতে পারবে। ]
বেদ যজ্ঞের ভগবান বা ঈশ্বর হচ্ছেন অগ্নি। এই অগ্নিই হচ্ছেন অনন্তলোক
প্রাপ্তির উপায়। অগ্নি সর্ব জগতের বিধারক। অগ্নি সর্বপ্রাণীর হৃদয় গুহায় বাস করেন।
হিরণ্যগর্ভ-জাত এই অগ্নি মূলতঃ ব্রহ্মেরই শক্তি। তাই গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন—“
আমি বৈশ্বানর(জঠরাগ্নি)- রূপে প্রাণীগণের দেহে অবস্থান করি এবং প্রাণ ও অপান বায়ুর
সাথে মিলিত হয়ে চর্ব্যচূষ্যাদি চতুর্বিধ খাদ্য পরিপাক করি”। তাই আমরা জানি—দেহ-
যন্ত্রে একখণ্ড রুটি ফেলে দিলে তা রক্তে পরিণত হয়। দেহাভ্যন্তরীণ কি কি
প্রক্রিয়াদ্বারা এই পরিপাক- ক্রিয়া সাধিত হয়, তা জড়বিজ্ঞান – চিকিৎসা বিজ্ঞান বলতে
পারে। কিন্তু কোন শক্তিবলে এই কার্য সাধিত হচ্ছে তা জড়বিজ্ঞান জানে না। এটাই হচ্ছে
আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান বা ঐশ্বরিক শক্তি। কেবল খাদ্য পরিপাক ক্রিয়া নয় জীবের সমস্ত
খাদ্য এই ঐশ্বরিক শক্তির উপর নির্ভরশীল। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন—আমি
অমৃতরসযুক্ত চন্দ্ররূপ ধারণ করে ব্রাহি ওষধিগণকে পরিপুষ্ট করে থাকি। কি বৃক্ষজগৎ,
কি প্রাণিজগৎ, সবার মধ্যে পরমাত্মার শক্তি নিরন্তর কাজ করছে এবং তার পুষ্টি ও
বর্ধন সমাধান করে চলেছে – যা জড়বিজ্ঞানের কোন সুত্রে ধরা পড়ে না। বেদান্তশাস্ত্র
এই শক্তিকে মহাপ্রাণের কার্য বলেছেন—এই কার্যই হচ্ছে অদৃশ্য ঐশ্বরিক শক্তির কাজ।
বেদের বৈশ্বানর অগ্নি মহাপ্রাণ হয়ে এই যজ্ঞ করে চলেছেন সবায়কে নিজের মধ্যে আশ্রয়
দিয়ে। তিনিই জগতের আত্মা, তিনিই সর্বের ধাতা পাতা। তিনি অজেয় অর্থাৎ তাঁহা হতে
শ্রেষ্ঠ কেউ নেই। তিনিই সূর্য, চন্দ্র, পৃথিবী, মনুষ্যাদি জীব, স্থাবর- জঙ্গম সবার
আত্মারূপে বিরাজ করছেন। তিনি সমস্ত ভুবনের গর্ভ ধারণ করেন, তাই সকলেই অগ্নি হতেই
জাত হচ্ছেন—অগ্নিকে ধারণ করেই বেঁচে থাকছেন—আবার অগ্নির উপর ভর করেই মুক্তি লাভ
করছেন। তাই বেদের মন্ত্রে বৈশ্বানর অগ্নির উদ্দ্যেশ্যে প্রার্থনা—“ আমরা যেন
বৈশ্বানরের কৃপায় স্থির থাকি। বৈশ্বানর ত্রিভুবনের সেবনীয়। তিনি কাষ্ঠদ্বয় হতে
উৎপন্ন হয়ে সূর্যের মধ্যে চলেন। সম্যক উদ্দীপিত তোমার তেজ সর্বেন্দ্রিয় পরিচালিত
করুক। তোমার তেজ প্রত্যেক ইন্দ্রিয় অনুভব করে”। অমর দেবগণও অগ্নিকেই কামনা করেন।
তাঁরা অগ্নিকে মহান জগদ্ব্যাপক পার্থিব বৈশ্বানর, বিদ্যুৎ ও সূর্য রূপে বর্ণনা করেছেন।
আমাদের দেহের মধ্যে যে অগ্নি আছে তা গায়ে হাত দিলেই বুঝা যায়। ৯৮ ডিগ্রী তাপ দেহে
সর্বদায় থাকে। এটার কম- বেশী হলেই মৃত্যুর আশঙ্কা। অগ্নির সমতা রক্ষা করে বায়ু। বায়ু ভিতরে ও
বাইরে অবস্থান করে অগ্নির সমতা রক্ষা করে প্রাণ, অপাণ, সমান, ব্যান ও উদান এই পঞ্চ
প্রাণকে দেহ মধ্যে ধারণ করে আমাদেরকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করে চলেছেন। এই অগ্নি
দেহে না থাকলে সবার কাজ বন্ধ হয়ে যায়- তাই অগ্নিই হলেন দেহের আত্মা। এই আত্মাই
পরমাত্মার সাথে যুক্ত হয়ে আমাদের শ্রীবৃদ্ধিসাধন করে করেছেন জ্ঞান- বিজ্ঞান-
ভক্তি- মুক্তির দিকে চালিত করে। তাই অগ্নি বিদ্যাই মানুষকে ব্রহ্মজ্ঞানী করে তোলে
ও অমরত্ব দান করে। হরি ওঁ তৎ সৎ।