বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—১৫/ ০৭/ ২০১৬ স্থানঃ—ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[
বেদ যজ্ঞ নিজ আত্মার উপর ভর করে করবে, তবেই দেখবে দৈহিক কামনা- বাসনা তোমাকে ছেড়ে
চলে যাবে।]
ঈশ্বর আমাদের নিত্য প্রয়োজনের
মধ্যে পড়েন না, তাই এই পৃথিবীর বুকে সমস্ত জীব দেহ নির্ভরশীল হয়ে নিত্যকে ছেড়ে
অনিত্য উচ্ছিষ্ট প্রসাদকে নিয়েই বিচরণ করে। ঈশ্বরের এই উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেয়ে দৈহিক
সুখকেই তারা নিজেদের চরম আনন্দের বিষয় বলে জানে। তাই তাদের চিন্তা- ভাবনা দেহকেই
কেন্দ্র করে ধাবিত হয় চারদিকে। দৈহিক মাংসের উন্নতি অবনতির দিকে তাদের যতটা খেয়াল
থাকে আত্মিক উন্নতির দিকে মোটেই তা থাকে না। তাই তারা নিজেই নিজের শত্রু হয়ে,
নিজেকে অন্ধকার কারাগারে বার বার আবদ্ধ করে। এই ভাব ঈশ্বরের শত্রুরাই নিয়ে চলে এবং
প্রতি পদে পদে ঈশ্বরের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠে। এরা কেউ ঈশ্বরের বন্ধু বা নিজ
আত্মার বন্ধু হতে পারে না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা তাই উচ্ছিষ্ট। এই উচ্ছিষ্ট হতেই
জীবের বা মানুষের সবকিছু চিন্ময় সম্পদ উদ্ভুত হয়েছে। ঋত, সত্য, তপস্যা, রাষ্ট্র,
শ্রম, ধর্ম ও কর্ম সবই এই ঈশ্বরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদে। আত্মা এই উচ্ছিষ্ট প্রসাদ
গ্রহণ করেন না। তাই আত্মা বা ব্রহ্ম কোনদিন উচ্ছিষ্ট হন না। এই সত্য জানিয়ে দেহের
মধ্যে আত্মা যে তাদেরকে বার বার বেদ যজ্ঞ করে নিজেকে মুক্ত করার কথা বলছে- সেই নিজ
আত্মার কথাও তারা শুনতে পায় না। এরা কিভাবে নিজের ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে তাঁর সাথে
যুক্ত হয়ে এক বিশ্বপরিবারের অন্তর্ভুক্ত হবে? ঈশ্বরের আত্মা যে দেহে বাস করেন সেই
দেহ মন্দিরকে পবিত্র রাখতে হয় সদায় তাঁর ধ্যানে নিজেকে লিপ্ত রেখে। বাইরের জগতের
কোন কামনা- বাসনা দিয়ে এই অন্তর্জগতের মন্দিরকে পবিত্র রাখা যায় না। কারণ আমাদের
কাছে ঈশ্বর তাঁর আত্মা দ্বারা নিজেকে প্রকাশ করেছেন এবং তাঁরই দেওয়া আত্মা দিয়ে তাঁকে
অনুসন্ধান করার নির্দেশ দিয়ে চলেছেন। তাঁর দেওয়া এই আত্মার ন্যায় পবিত্র দ্বিতীয়
কিছু থাকতে পারে না। এই পবিত্র আত্মার উপর ভর করেই পরব্রহ্ম পরমেশ্বরকে সন্ধান
করতে হয়। মানুষ বা জীবের জীবনের এই বিষয়গুলি কে জানে? কেবল মানুষের অন্তরস্থ আত্মা
জানে, তেমনি ঈশ্বরের বিষয়গুলি কেউ জানে না, একমাত্র ঈশ্বরের আত্মা জানেন। ঈশ্বরের
আত্মা যখন মানুষের আত্মার সাথে সেতু বন্ধন করেন তখনি মানুষ তাঁর ঈশ্বরের মহিমা
জানতে পারে এবং উচ্ছিষ্ট থেকে মুক্ত হয়ে আত্মা নির্ভরশীল হয়ে মুক্তভাবে বিচরণ করে।
জয় বেদ যজ্ঞের জয়।