বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—১০/ ০৭/ ২০১৬
স্থানঃ- ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃ ব
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ-[
বেদ যজ্ঞ করেই তোমরা উত্তম জ্যোতিতে নিজেকে রূপান্তরিত কর, তাহলেই আর ভেদ দর্শন
হবে না।]
ব্রহ্মবিদ না হয়ে কেউ যদি ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তবে কে শত্রু আর কে
মিত্র তা জানার তাদের যোগ্যতা থাকে না। ফলস্বরূপ তারা হত্যা- হিংসা- হানাহানিতে
জড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর বুকে বিপর্যয় সৃষ্টিতে উন্মত্ত হয়ে পড়ে। যে জ্যোতি পরব্রহ্মে
প্রকাশিত তা দিব্যলোকের ন্যায় সর্বব্যাপী পুরাতন ও জগৎকারণ। এই পুরানো চিরবিদ্যমান
জগৎকারণ জ্যোতিতে নিজেকে রূপান্তরিত করার জন্যেই ধর্মযুদ্ধের অনুষ্ঠান করতে হয়।
সেই পরমজ্যোতিকে বেদ যজ্ঞের মাধ্যমে সর্বত্র দর্শন করার অভিপ্রায় নিয়ে সংগ্রাম
করলেই তাঁর বিশ্বরূপ দর্শন হয় এই ধর্মযুদ্ধে। সমস্ত অন্ধকার রাজত্বের অবসান ঘটে ও
ধর্ম রাজত্বের প্রতিষ্ঠা হয় তাঁর পৃথ্বীলোকে। এই ধর্মরাজ্যের প্রতিষ্ঠার জন্যে কোন
জীবকে জবাই করতে বা বলি দিতে হয় না। নিজেকে জবাই করতে বা বলি দিতে হয় পরমেশ্বরের
ব্রহ্মময় শ্রীচরণে। নিজেকে পৃথ্বীর সন্তানরূপে জেনে পৃথিবীস্বরূপ দেহ নিয়ে
ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলে ভুমার মধ্যে অবস্থান রত উত্তমজ্যোতির দর্শন ও তাঁরই
মধ্যে অবস্থিত ঈশ্বরের বিশ্বরূপ কিভাবে মানুষ দেখবেন? এই দর্শন লাভ করার জন্যই
ধর্মযুদ্ধের আয়োজন করা হয় এবং ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এই
ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য আহার শুদ্ধিকরণ একান্ত প্রয়োজন। এই আহারের উপর
মানুষের দেহমনপ্রাণের শুদ্ধি ঘটে। আহার মানে শুধুমাত্র খাদ্যবস্তু নয়। দর্শন-
চিন্তন- মনন- আসন- প্রাণায়ামাদি সমস্ত বিশুদ্ধ কর্মই হচ্ছে দেহমনপ্রাণের আহার।
মানুষ কোন জীবকে যেভাবেই হত্যা করুক না কেনো সেই হত্যার ছাপ তাঁর দেহমনপ্রানে
লাগবেই এবং এর ফলে তাঁর ধ্রুবাস্মৃতির পথ রুদ্ধ হতে থাকবে। মানুষ মাত্রই চিরন্তন
স্মৃতি নিয়ে নিজেকে বেদসুর্য রূপে উদিত করার জন্য এই পৃথিবীর বুকে পৃথিবী স্বরূপ
দেহ ধারণ করেন। কিন্তু মানুষ সমাজের মিথ্যা ধর্মীয় সংস্কারে জড়িয়ে- পার্থিব জগতের
লোভ- মোহ ইত্যাদিতে জড়িয়ে সেই স্মৃতির লোপ ঘটান। তাই নিজের ভিতরের চিরবিদ্যমান ব্রহ্মজ্যোতিকে
দেখতে পান না। পথভ্রষ্ট হয়ে নিজের ধর্ম ত্যাগ করে পরধর্ম গ্রহণ করে এক ভয়াবহ
জীবনের শিকার হন। জয় বেদ যজ্ঞের জয়।