বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—০২/ ০৭/ ২০১৬ স্থানঃ-ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[
বেদ যজ্ঞ বা ধর্ম যুদ্ধ করলে অন্তরে ভেদ জ্ঞানের উদ্ভব হয় না ও কোন জাগতিক অন্ধকার
অন্তরে থাকে না।]
বেদ পড়লে ভেদ থাকে না। কথাটি খুব মূল্যবান। ভেদজ্ঞানই জীবন পথে যুদ্ধ। ভেদজ্ঞানের
ঊর্ধ্বে গেলেই যুদ্ধ বিরতি। বেদের যুদ্ধ, অস্ত্র- শস্ত্রের যুদ্ধ নয়। কোন ভৌগলিক স্থানে; যেমন লঙ্কায়
বা কুরুক্ষেত্রে সংঘটিত যুদ্ধ নয়। বেদের যুদ্ধ ভাব রাজ্যে, মানস ভুমিতে অন্তরের
দেব- দেবতাদের প্রাধান্য নির্ণয় করে তাঁদের সিংহাসনে বসানোর যুদ্ধ। বাইরের জগতের
যুদ্ধে একজন অপরজনকে পরাজিত করে নিজেকে কোন কিছুর কর্তৃত্বের আসনে বসাতে চায়। বেদ
যুদ্ধে অন্তরের দেব- দেবতার মধ্যে যুদ্ধ হয়, শেষটায় সব দেবতাকেই সমান জয়ী রূপে
দেখতে হয়। অন্য দশখানা গ্রন্থের মত বেদ একখানি গ্রন্থ নয়। বেদ আগাগোড়া ঋষির সত্য
দর্শন। এখানে সত্য দ্রষ্টা ঋষি একজন নয়, অনেক। তাই এখানে কোন একজনের আলো নয়, এ যেন
হাজার সূর্যের সমাবেশ বেদ যুদ্ধ প্রাঙ্গণে। সারা বিশ্বজুড়ে সত্য দ্রষ্টা ঋষিরা
বিভিন্ন দৃশ্য ও অদৃশ্য বিষয় বস্তুর মধ্যে সত্যকে খুঁজেছেন এবং তাঁর খোঁজ পেয়ে
গুণগান করেছেন। এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে সর্ববিধ শৃঙ্খলা রক্ষায় লৌকিক ও
নৈতিক পথ আবিষ্কার করেছেন মানবজাতির কল্যাণের জন্য। এসবই বেদে যুদ্ধ—ভাবরাজ্যের
যুদ্ধ। এই যুদ্ধ শেষ হলো কখন? যখন সকল ঋষি ঘোষণা করলেন, “একং সদ্বিপ্রাঃ বহুধা
বদন্তি”। পরম সৎ বস্তু একটিই। পণ্ডিতরা তাঁকে নানা নামে অভিহিত করেন। অগ্নি, বায়ু,
ইন্দ্র, সূর্য, বরুণ এক জনেরই ভিন্ন ভিন্ন নাম। যুদ্ধে সকলেরই জয় হল। দিন- রাত্রির
অবসান ঘটলো—এই যুদ্ধ শেষে কেবল আলো আলো আর আলোর প্রাধান্য বজায় থাকলো। এই আলোয়
হচ্ছে বেদজ্যোতিঃ, দিব্যজ্যোতিঃ অন্তর্জ্যোতিঃ ও ঋষিদের ত্রিকালজ্ঞ সত্যদৃষ্টি।
আমরা বেদ অধ্যয়ন করলেই দেখতে পাবো আর্য ঋষিদের প্রবল আর্তি, অন্ধকার থেকে আলোতে
সকলকে নিয়ে যাবার জন্য। আলো, আরও আলো, আরও আলো চাই, আরও আলো—যা চরম আলোর আলো,
জ্যোতিগণের আলো—তাঁর সাযুজ্যই আর্য, আর্য ঋষিদের একমাত্র মৌলিক কামনা ছিল। অন্তরে
বাহিরে ঐ একটি কামনা নিয়েই তাঁরা বিশাল যুদ্ধ ক্ষেত্র পরিক্রমা করতেন। জয় বেদ
যজ্ঞের জয়।