বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—২৫/ ০৬/ ২০১৬ স্থানঃ- ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ *পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[
বেদ যজ্ঞের দ্বারাই মিত্রের পূজা করে মিত্র নির্বাচন করবে- তাহলে সংসারে বা
রাজত্বে কোনদিন অশান্তি প্রবেশ করতে পারবে না।]
বেদ যজ্ঞ করলেই বেদের দেবতাদের
মানবিক রহস্য উন্মোচিত হতে থাকবে। এক পরব্রহ্মকে কেন্দ্র করেই সবার উৎপত্তি হয়েছে-- মানবিকসত্তাকে
চিরজাগ্রত করে ধরে রেখে -- মানুষ ও দেবতার মধ্যে একটা সুদৃঢ় সংগঠন গড়ে তোলার জন্য।
দেবতারাও মানুষের বন্ধু হয়ে মানুষের জন্যেই নিজেদের রাজত্ব গড়ে তুলেছেন ও সমস্ত
রকম সাহায্য সহযোগিতা করে চলেছেন নিজেদের শক্তিবলে। বেদ সেই দেব-দেবতাদের তুলে ধরে
মানুষকে বেদযজ্ঞের মাধ্যমে মহাসত্যের দিকে নিয়ে চলেছেন। বরুণ ও মিত্র দুজনই বেদের
দেবতা। বরুণ রহস্যময় সমুদ্র। সমুদ্র একটি নহে। পৃথিবীতে যেমন জলের সমুদ্র,
অন্তরিক্ষে প্রাণের সমুদ্র, আর দ্যুলোকে আলোর সমুদ্র, এক রহস্যময় তুরীয় সমুদ্র
অব্যক্ত আনন্দের সমুদ্র—প্রেমের সমুদ্র। বরুণ পরম শূন্যতা। বরুণ অত্যন্ত আপন হলেও
আমরা তাঁর নাগাল পাই না। মিত্র দেবতা হচ্ছেন বরুণের মাধুর্য। এই মাধুর্য আছে বলেই
আমরা বরুণকে আপনজন করতে পারি। এই জন্যই মিত্র ও বরুণ যুগ্মদেবতা। তেমনি পরমাত্মা
আমাদের আপনজন হলেও আমরা তাঁর নাগাল পেতে পারি না, তাই আমাদেরকে নিজ আত্মাকেই মিত্র
করে নিয়ে তাঁর মাধুর্য লাভ করতে হয়। তাই বেদে আত্মা ও পরমাত্মা যুগ্মদেবতা।
শ্রীরামচন্দ্রের রাজত্বের যে এত মহিমা তার বড় কারণ তাঁর মিত্র বা মন্ত্রী ছিলেন
বশিষ্ঠ ঋষি। মিত্রের কাজ হলো ঋত অর্থাৎ সত্য ও নিয়ম- শৃঙ্খলার রক্ষক হয়ে সদায়
মিত্রের পাশে অবস্থান করা। সত্য ও নিয়ম শৃঙ্খলা ছাড়া কেউ নিজের ধর্ম রক্ষা করতে
সক্ষম হয় না—সে মানুষ হৌক আর দেবতা হৌক। আর এই কাজে সাহায্য- সহযোগিতা একমাত্র
মিত্রই করতে পারেন মন্ত্রী হয়ে। সংসারে স্বামী রাজা হলে তাঁর মিত্র বা মন্ত্রী
হলেন স্ত্রী। মিত্র দেবতার পূজা না করলে-- তাঁকে সন্তুষ্ট করে না রাখতে পারলে -- সমাজ-
সংসার- রাজত্ব সব লোপাট ও ছারখার হয়ে যাবে। বেদের এই সত্য জেনেই একসময় সারা
বিশ্বেই মিত্র দেবতার পূজার প্রচলন ছিল। বেদে যিনি মিত্র, আবেস্তায় তিনি পারসিকদের
মিথ্র দেবতা। বর্তমান খ্রিষ্টান ধর্ম অবলম্বনকারীরা সকলেই মিত্র দেবতার উপাসক
ছিলেন। পবিত্র বাইবেলে যে মানব প্রেমের কথা আমরা পেয়ে থাকি তা বেদের মিত্র দেবতার
সাথে কোন পার্থক্য নেই। মিত্র কথাটার অর্থ হচ্ছে মৃত্যু হতে যিনি ত্রাণ করেন—তিনিই
মিত্র। তাই বেদযজ্ঞ করেই আমাদেরকে প্রকৃত মিত্র নির্বাচন করে জীবন পথে এগিয়ে যেতে
হবে। আমরা দেবতাদের মিত্র করে তাঁর পূজা করলে তাঁরাও আমাদেরকে মিত্র করে আমাদের
পূজা করবেন। আমরা মানুষকে মিত্র করে তাঁদের পূজা করলে মানবজাতিও আমাদের পূজা
করবেন। আর যদি আমরা অসুর- শয়তান- রাক্ষস শ্রেণির মানুষদের মিত্র করতে যাই তবেই
ভুলে ভরা জীবন নিয়ে আফসোস করতে হবে—কারণ শয়তান- অসুর- রাক্ষস কখনো মানুষের বা
দেবতার মিত্র হতে পারেনা। জয় বেদযজ্ঞের
জয়।