বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—২০/ ০৬/ ২০১৬ স্থানঃ ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজেকের আলোচ্য বিষয়ঃ-[ বেদ যজ্ঞ করেই তোমাদেরকে বিরাটের সান্নিধ্যলাভ করে
সুখী হতে হবে।]
বেদ যজ্ঞ করে তোমরা যিনি সব চেয়ে বড় তাঁর সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করো—তাহলেই
দেখতে পাবে তোমাদের জীবনও বিশাল হয়ে যাবে। সব চেয়ে যিনি বড় তাঁর সঙ্গে যোগ
স্থাপনেই মানুষের সুখ। একদিন এক সন্ন্যাসী এক দানী রাজার কাছে কিছু দানলাভের আশায়
গেলেন। তিনি রাজার ঘরে গিয়ে দেখলেন—রাজা ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করছেন—হে প্রভু
আমাকে আরো শক্তিশালী সৈন্য দাও—আমাকে আরও ধন দাও—আমাকে আরও ধন-জন- রাজ্য দাও
ইত্যাদি। রাজার পূজা শেষ হলে সন্ন্যাসীকে সমাদার করে জিজ্ঞাসা করলেন—আপনার জন্য
আমি কি করতে পারি? আপনি আমার কাছে কি চান? সন্ন্যাসী রাজার কথা শুনে চলে
যাচ্ছিলেন। রাজা তখন অনুনয়- বিনুনয় করে তাঁকে
বসার জন্য বলতে লাগলেন। তখন সন্যাসী বললেন—রাজা আমি আপনার কাছে কিছু
অর্থদের দাবী নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু এসে দেখলাম আপনিও সেই অর্থ- ধন- দৌলত একজনার
কাছে চাইছেন। তা দেখে আমার জ্ঞান হয়ে গেলো যে ভিখারীর কাছে কোন দান নিয়ে কেউ
কোনদিন সুখী হতে পারেনা। তাই তা যদি নিতেই হয় তবে আপনি যার কাছে এগুলো চাইছেন—আমিও
তাঁর কাছেই গিয়ে আবেদন করবো। বেদে ঠিকই বলেছে –‘ নাল্পে সুখমস্তি’—অল্পে সুখ নেই,
ক্ষুদ্রতায় সুখ নেই, সীমাবদ্ধতায় শান্তি নেই। রাজা আপনি আপনার যে পরিচয় দিলেন তা
তো ক্ষুদ্রতার পরিচয়, এই মনোভাব জগতের কল্যাণের পথে যেতে পারেনা। বিশ্বের মূলের
সাথে আমাদের সবার জীবনের যোগ আছে—এই সত্য স্বীকার করে নিয়ে জগতের সবার মঙ্গল কামনা
করাতেই জীবনের সার্থকতা। আমি যার কাছে অমৃত নাই তাঁর কাছ থেকে কি আশা করতে পারি?
রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি তাই চিন্তা করেই আমার আগমন হয়েছিল এই রাজপ্রাসাদে। এখন
দেখলাম এই রাজপ্রসাদ একজন ভিখারীর আরাধনা স্থল।
এই রাজপ্রাসাদে বসে দেবালয়ে আপনি ঈশ্বরের কাছে অর্থ –মান- যশ কামনা করছেন।
যারা নিজ স্বার্থে ঈশ্বরের আরাধনা করেন তারা তো ভিখারী—সেই ভিখারীর কাছে মানুষ কি
আশা করতে পারে? রাজা নির্বাক হয়ে গেলেন—সন্ন্যাসী রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করলেন। গুরুদেব
তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন—রাজার নিকট থেকে কি ধন আনলে? সন্ন্যাসী উত্তর দিলেন—এখানে
রাজা- প্রজা সকলেই ভিখারী—সকলেই নিজের নাম, যশ প্রতিষ্ঠা করার জন্যেই পাগল—এই
পাগলদের কাছে প্রভু কি ধন আশা করতে পারি? গুরুদেব বললেন—তুমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
হয়েছো—এগিয়ে চলো বিরাটের সান্নিধ্য লাভ করার জন্য। অন্তঃকরণের সুক্ষার্থ বিবেচনার সামর্থ্যকে বুদ্ধি বলে আর
বুদ্ধি দ্বারা আত্মা ও অনাত্মাদি পদার্থের বোধকে জ্ঞান বলে। তোমার সেই জ্ঞানের উদয়
ঘটেছে দেখে আমি খুশী। আর তোমাকে প্রতিষ্ঠা, জনসংযোগ, বিষয় সঞ্চয়, শিষ্যসংগ্রহ,
দিবানিন্দ্রা বা অলীক স্বপ্ন ও বৃথা বাক্যব্যয়ের ন্যায় পাপ স্পর্শ করতে পারবে না।
কারণ তুমি বিরাটের আশ্রয়ে চলে এসেছো বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে। এখন গুরু
শিষ্য- রাজা-প্রজা সকলকেই কলি গ্রাস করবে—সবায় অশান্তির আগুনে পুড়বে বেদকে ছেড়ে
দিয়ে নিজ নিজ ভাবকে প্রতিষ্ঠা করে পার্থিব জগতের সুখ- স্বাচ্ছন্ন ক্রয় করে নিজের
মান- নাম- যশ- প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আর কেউ হিমালয়- সাগর- চন্দ্র- সূর্য- অগ্নিকে
দোহন করে অমৃত ভক্ষণ করবে না—সবায় ছুটবে তাঁদেরকে হত্যা বা ধ্বংস করে এই পার্থিব
জগতের সুখ কেনা –বেচার ব্যবসায় করতে। এগিয়ে চলো বৎস বিরাটের দিকে অভাবমুক্ত
জীবনলাভ করো তাঁর আশ্রয়ে থেকে। পরম বস্তুকে বাদ দিয়ে, ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে রাজা-প্রজা
কেউ বিশ্বের কল্যাণ করতে পারেনা ও তাঁদের দ্বারা বিশ্বে কল্যাণ আসতেও পারেনা, এই
বেদের মূল কথা। যারা ঈশ্বরের সঙ্গী, সত্যদ্রষ্টা ঋষি পুরুষ, এমন শত শত ঋষি, মুনি,
অবতার সকলেই এক বার্তা দিয়ে গেছেন—তোমরা বিরাটের সাথে যুক্ত হয়ে তাঁর আশ্রয়ে থাকো—তাতেই
তোমাদের সুখ- তাতেই তোমাদের আনন্দ- তাতেই তোমাদের পরম শান্তি। ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ
শান্তিঃ।