বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—১৯/ ০৬/ ২০১৬ স্থানঃ-
ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদ যজ্ঞ করে তোমরা দিব্যজীবন লাভ করো।]
বৈদিক অনুষ্ঠান সনাতন ধর্মের সকল মানুষ-
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত করে থাকেন- বিভিন্নভাবে বেদের মন্ত্র উচ্চারণ করে। এসব
বৈদিক অনুষ্ঠানের মধ্যে যজ্ঞই প্রধান—আর যজ্ঞের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যজ্ঞ হচ্ছে
জ্ঞানযজ্ঞ বা বেদযজ্ঞ। যজ্ঞের প্রধান উপচার অগ্নি ও ঘৃত। প্রতি জীবেই অগ্নি আছেন
দেবতা হয়ে সুপ্ত অবস্থায়। পূজা, আরাধনা, নাম সংকীর্তন, জপ ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি
জেগে উঠেন জীবের হৃদয় গুহা মন্দিরে। তিনি জেগে উঠলেই তখন জীবের অন্তরে জাগে
পরমপুরুষের সাথে মিলনের তীব্র লালসা। অগ্নিতে তাপ আছে, আর আছে আলো। তাপ পরব্রহ্মের তপঃশক্তি, আলো তাঁর
জ্ঞানশক্তি। আমাদের সাধনার ফলে অন্তরের নিদ্রিত-অগ্নি জেগে উঠলেই জীবন থেকে সরে
যায় সকল পথের বাধা- বিঘ্ন, তখনি দূর হয়ে যায় জীবনের ক্ষুদ্রতা। অন্তরে জাগে এক
বিশাল ব্যাপকতা। ক্ষুদ্র স্বার্থবুদ্ধি দূরে চলে যায় জীবন থেকে, তখন বিশ্বের সকলকে
আপন করে নিতে সাধ জাগে। নিজেকে বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী ছাড়া অন্যকিছু ভাবতেই পারা
যায় না। তখন শুরু হয় যিনি সকল জীবনের জীবন তাঁর সাথেই এক হয়ে থাকার সাধনা বা
চিন্তা। এই চিন্তায় বা তাঁর সন্ধানলাভেই জীবনে এক পূর্ণতা আসে। বেদের প্রথম
মন্ত্রে বলা হয়েছে—অগ্নি যজ্ঞের পুরোহিত, অগ্নি যজ্ঞের হোতা, অগ্নি দীপ্তিমান,
অগ্নি যজ্ঞের ঋত্বিক, দিব্য ঋত্বিক, অগ্নি রত্নধারী, উৎকৃষ্ট রত্নদাতা। এই মন্ত্র
অনুযায়ী আমরা সবায় বেদযজ্ঞের পুরোহিত, হোতা, দীপ্তিমান, ঋত্বিক, দিব্য ঋত্বিক,
রত্নধারী ও উৎকৃষ্ট রত্নদাতা—কারণ অগ্নি আমাদের সবার জীবনকে ঘিরে রয়েছেন। তিনি
দেহে না থাকলে কে বেদযজ্ঞের আলো ও তেজ প্রদান করবেন? অগ্নিতে ঘি দিলেই তা উজ্জ্বল
শিখা নিয়ে জ্বলে উঠে। বেদে ঘৃত শব্দের অর্থ দীপ্তি। ‘ধিয়ং ঘৃতাচীম’ – এর সহজ অর্থ
উজ্জ্বল জ্যোতির্ময় বুদ্ধি। ঘৃত অর্থ দীপ্তি, ইহা বাইরের আলো মাত্র নয়—অন্তরের
জ্যোতি। তাই জীবনের অগ্নি হলেন সবার দিব্যজ্যোতি- আনন্দজ্যোতি। তাই বেদযজ্ঞ অন্তরে
বিদ্যার সাধনা করে চলেছে অগ্নিকে জাগিয়ে তোলার জন্য এবং দেবতার আশীর্বাদ নিয়ে
দেবতাকে বরণ করে তাঁর সান্নিধ্যলাভ করে তাঁর গুণে গুণাম্বিত হবার জন্য। তাই আমরা
বেদ যজ্ঞ করে যত অগ্নিতে ঘি বা নিজের জ্যোতির্ময় ঢেলে অগ্নিকে দীপ্ত করবো ততই আমরা দেবত্বগুণে
দীপ্ত হতে থাকবো এবং দিব্য শিখা নিয়ে নিজেকে প্রজ্জ্বলিত করতে সক্ষম হবো। জয় বেদ ভগবান অগ্নির জয়।