বেদ
যজ্ঞ সম্মেলনঃ—১১/ ০৬/ ২০১৬ স্থানঃ ঘোড়শালা মুর্শিদাবাদ পঃবঃ আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদ
যজ্ঞ করে চলো নিজ নিজ ধর্মে স্থির থেকে তাতেই তোমরা কর্মে সিদ্ধিলাভ করে
জ্ঞানমার্গে পৌঁছে যাবে ও নিজেকে সৎ- সত্য- সুন্দর ও জ্যোতির্ময় সত্তা রূপে জানতে
পারবে।]
যে মানবগণ
শ্রদ্ধাবান হয়ে, চাহিদাশুন্য-অহংকারশুন্য হয়ে, বেদ যজ্ঞ করে তারাই ঈশ্বরের প্রিয় হয়ে উঠে। তারা তো সকলেই ঈশ্বরের মতের কর্ম
অনুষ্ঠান করে নিজের ধর্ম মনুষ্যত্বের উপর স্থির থাকে। তারা এই
বেদ যজ্ঞের মাধ্যমে নিজেকে জেনে কর্ম বন্ধন হতে মুক্ত হয়ে-- কেবল সংসার ধর্ম পালন
করে-- মানবিক গুণের উপর স্থির থেকে। তাই তাদেরকে কোন কর্ম বন্ধনের মধ্যে পড়তে হয়
না -- এই চাকচিক্যময় জগতে। আর যারা নিজ প্রবৃত্তি পরবশ হয়ে কর্ম করে তারা
কর্মযোগের কৌশল না জানার কারণে কর্ম বন্ধনের নাগপাশে আবদ্ধ হতেই থাকে। এই বিবেকহীন
ব্যক্তিগণ নিজের ধর্ম পালন করতে অক্ষম হওয়ায় তারা পথভ্রষ্ট ও বিনষ্ট হয়ে যায় নিজের
দোষে। ঈশ্বর নিজের গুণের মাত্রা দিয়ে মানবজাতিকে চার শ্রেণিতে ভাগ করে সৃষ্টি
করেছেন এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের ধর্মের উপর স্থির থেকে সংগ্রাম বা ধর্মযুদ্ধ
করে-- সংসার ধর্ম পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সকল ব্যক্তিকেই এই
ধর্মযুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান দান করেছেন। কিন্তু জ্ঞানবান ব্যক্তিরাও এই
তত্ত্বে স্থির থাকতে পারেনা চাকচিক্যময় জগত দেখে মোহিত হয়ে। অজ্ঞ ব্যক্তিদের কথা
আর কি বলা যাবে? অজ্ঞ ব্যক্তিরা নিজেদের ইন্দ্রিয়গুলিকে সংযত করতে সক্ষম নয় পশুদের
মতো তাই তারা নিজেদের অন্তরের গুণ মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করতে সক্ষম হয় না। মনুষ্য
দেহে অবস্থিত সকল ইন্দ্রিয়ের স্ব স্ব বিষয়ে রাগদ্বেষ নিয়ে অবশ্যই সদায় সক্রিয়
থাকে। এই ইন্দ্রিয়গুলিকে সংযত করার কৌশল বা যোগশিক্ষা না থাকলে কেউ কাম- ক্রোধ-
লোভ- মোহ- মদ ও মাৎসর্যকে বশে রেখে কর্মে সিদ্ধি লাভ করতে পারেনা। এই
ইন্দ্রিয়গুলিই মানুষকে মোহিত করে শ্রেয়মার্গে যেতে বাধা সৃষ্টি করে থাকে। তাই
মানুষকে জানতে হয় সে পূর্বজন্মের কর্মফল অনুসারে ঈশ্বরের কোন মাত্রা নিয়ে জন্ম
গ্রহণ করেছে তাঁর সেবা করার জন্য। শূদ্র – বৈশ্য- ক্ষত্রিয় ও ব্রাহ্মণের মাত্রা
দিয়ে সব মানুষের সৃষ্টি। এখন নিজেকেই ওজন
করে জেনে নিতে হবে তার মধ্যে কোন মাত্রার আধিক্য বেশী। যে যে মাত্রা নিয়ে এসেছে এই
কর্মভূমি ও জ্ঞানপীঠে তাকে সেই গুণের বিকাশ ঘটিয়ে ঈশ্বরের সেবা করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা
নিয়ে ধর্মযুদ্ধ করে যেতে হবে। নিজের ধর্ম কিঞ্চিত দোষযুক্ত হলেও তাকেই উত্তম জেনে
ও শ্রেষ্ঠ মনে করে তা উত্তমরূপে পালন করায় তার ধর্ম। স্বধর্মকে পরধর্ম অপেক্ষা
শ্রেষ্ঠ মনে করে সেই পথেই সদায় কল্যাণকর কর্ম করে পরার্থে জীবন উৎসর্গ করার কৌশল
জেনে নিলেই সে জাগতিক দুঃখের হাত থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে অমৃতের সন্তান রূপে জানতে
পারবে। নিজের ধর্মে স্থির থেকে নিজের জীবন চলে গেলেও তাকে শ্রেষ্ঠ জানবে কিন্তু
কখনো পরধর্মের প্রতি আসক্ত হয়ে সেই ধর্ম পালন করতে গেলেই নিজের পতন নিজেই ডেকে
আনবে ও জীবনে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করবে। মানুষ সবকিছু জেনেও অনিচ্ছা সত্ত্বেও
পাপের পথে যেতে বাধ্য হয় কেনো ? এ নিয়ে আলোচনা করলে দেখবে পাবো—প্রত্যেক মানুষ
সাময়িক লাভের কথা- এই জীবনের সুখ- স্বাচ্ছন্দ- লাভ- লোকসান ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা
করে প্রতিনিয়ত প্রবৃত্তির দাস হয়ে নিজের ধর্ম ত্যাগ করে পর ধর্মের মোহে মোহিত হয়ে
হিংসা- দ্বেষ – ঈর্ষা- মোহ – কাম- ক্রোধে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এই উগ্রভাব নিয়ে সে
কিছুতেই পরকাল বা পরের জীবনকে উন্নত করে গড়ে তোলার জন্য চিন্তা করতেই পারছে না –
সেই কারণে বাইরের জগতের মধ্যেই তার জ্ঞান-বুদ্ধি সীমাবদ্ধ হয়ে থাকছে আর
অন্তর্জগতের বিশালত্ব সে দেখতে পাচ্ছে না। জয় বেদ ভগবানের জয়।