বেদ
যজ্ঞ সম্মেলনঃ—০৫/ ০৬/ ২০১৬
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ-[ বেদ যজ্ঞ করেই সাত্ত্বিক- রাজসিক ও তামসিক ভাবকে
ঐশীশক্তিতে পরিণত করে নিজ নিজ জীবনকে ঈশ্বরের জ্ঞান- বিজ্ঞানের ঘরে রূপান্তরিত
করো।]
হে ভারত বেদ যজ্ঞ করে
তোমার অন্তরের ঈশ্বরকে জাগ্রত করো – তিনিই বলবানদিগের সাত্ত্বিক বল তা বেদ যজ্ঞ
করেই জানতে পারবে। তোমার মধ্যে যে কামরাগ রহিত বল রয়েছে তা
তোমার ঈশ্বরের বলরূপেই বেদ যজ্ঞের মাধ্যমে তাকে দেখতে পাবে। প্রাণিগণের ধর্ম রক্ষা করে যে কাম তা
তোমার অন্তরের ঈশ্বরের সাত্ত্বিক শক্তি তা তাঁর জ্ঞান- বিজ্ঞানযুক্ত শক্তির ঘর
থেকেই উৎপন্ন হয়ে চলেছে বেদ যজ্ঞের মাধ্যমে। তাই বেদ যজ্ঞ করেই জানতে হবে প্রাণীর
অন্তরে যে সাত্ত্বিক- রাজসিক ও তামসিক ভাব জাত হচ্ছে প্রকৃতির প্রভাবে তা ঈশ্বরের
শক্তির দ্বারাই। হর্ষ –দর্প – লোভ এই রাজসিক ভাব ঈশ্বরের শক্তি থেকেই জাত। শোক-
মোহাদি তামসিক ভাব তাও ঈশ্বরের শক্তি থেকেই উৎপন্ন হচ্ছে। একই শক্তির ঘর থেকে শম-
দম- যম- তপ-জপ ইত্যাদি সাত্ত্বিক ভাব উৎপন্ন হয়ে কোন প্রাণিকে মহৎ করছে আবার কাউকে
নিকৃষ্ট করছে এটাই ঈশ্বরের লীলাখেলা। এই বেদ ভগবান প্রেমময় রূপে সবার মধ্যে বিরাজ
করছেন অথচ তিনি কারোও অধীনে নন। তিনি তাঁর জ্ঞান- বিজ্ঞানের ঘর থেকে জগতের সবায়কে
সৃষ্টি করে এই তিন গুণ দ্বারা মোহিত করে রেখেছেন। বেদ যজ্ঞ করেই তিনি সবায়কে
সৃষ্টি করে চলেছেন বেদের ধারা মান্য করে। এই বেদ তও্ব মেনে যারা ত্রিগুণাতীত হবার
জন্য বেদ যজ্ঞ করে চলেন কেবল তাঁরাই তাঁর কৃপা লাভ করে এই সৃষ্টি রহস্য জানতে
সক্ষম হন। ঈশ্বরের জ্ঞান-বিজ্ঞানের ঘরের মায়া অতিক্রম করে তাঁকে জানা এবং তাঁর
আশ্রয় লাভ করে তাঁর সৃষ্টি তত্ত্ব জানা ও সেই তত্ত্বকে বিশ্বাস করা বড়ই কঠিন
সাধনা। যারা কেবল বেদ যজ্ঞ করে বেদ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত হয়ে থাকেন ও তাঁকেই
ভজনা করেন – তাঁরাই কেবল এই সুদুস্তরা মায়া উত্তীর্ণ হতে পারেন যদি তাঁর কৃপা হয়
তবেই। এখানে মানুষ মায়াদ্বারা হতজ্ঞানাচ্ছন্ন হয়ে আসুর স্বভাবের হয়ে যায় এবং
বিবেকশুন্য হয়ে বিভিন্ন পাপ কর্মে লিপ্ত হতে বাধ্য হয় প্রকৃতির বশে। এই স্বভাবের
মানুষরা ঈশ্বরের ভজনা করে নিজেদের অহংকারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এরা বেদ যজ্ঞ করে
না—এরা ঈশ্বরকে চিনতে পারে না – তাই এরা মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন
ধর্ম ও মতের সৃষ্টি করে। নিজেদের কামনা- বাসনা চরিতার্থ করার জন্য এই আসুরিক
শ্রেণির মানুষরা ঈশ্বর ভজনার নাম করে কিছু মত ও ধর্ম সৃষ্টি করে থাকে এবং নিজেদের
সৃষ্ট ঈশ্বরকে আরাধনা করে ঐহিক সুখ ভোগের কামনা দ্বারা নরক যাবার পথ প্রশস্ত করে
মাত্র। এরা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়ে অপরকেও পথভ্রষ্ট করে। যারা কেবল ঈশ্বরকেই চান এমন
সুকৃতিশালী মহানরা কেবল তাঁর ভজনা করেন এবং সব ধর্ম ও মতকে ছেড়ে কেবল তাঁর আশ্রয়ে
থাকেন। এমন সুকৃতিশালী মহান ঈশ্বর সন্ধানী চার শ্রেণির সাধক বা গবেষক এই মানব
সমাজে দেখা যায় – এঁরা হলেন আর্ত- জিজ্ঞাসু- অর্থাথী এবং জ্ঞানী। এই চার শ্রেণির
মানুষ কেবল ঈশ্বরের ভজনা করে তাঁকে জানতে পারেন এবং তাঁর সান্নিধ্য লাভ করে ধন্য
হন। এই চার শ্রেণির ভক্তের মধ্যে জ্ঞানী ভক্ত ঈশ্বরের অতি প্রিয় কারণ জ্ঞানীর
প্রিয় বলতে একমাত্র ঈশ্বর—তাঁর প্রিয় বন্ধু বলতেও সেই একমাত্র তিনি। তাই তিনি সতত
ঈশ্বরেই যুক্তচিত্ত ও ভক্তিমান হয়ে সর্বভূতেই তাঁকে দেখেন। জ্ঞানীরা ঈশ্বরের অতি
প্রিয় হওয়ায় তিনি তাঁদের দ্বারাই নিজের অভীষ্ট কর্ম করেন এবং মানব সভ্যতাকে
উজ্জ্বলতা দান করেন। বেদ যজ্ঞকারী জ্ঞানী মহানরা ঈশ্বরের আত্মাস্বরূপ। তাঁদের পথই
হচ্ছে জগতের সকল প্রাণির পথ। এই রূপ জ্ঞানী মহাত্মা জগতে দুর্লভ। অনেক জন্ম
অতিবাহিত করে এমন জ্ঞানী জীবন লাভ করে থাকেন মানব সন্তান। এই মানব সন্তানদের
দ্বারাই জগতের সবার কল্যাণ হয়ে থাকে—কারণ ঈশ্বর তাঁদের প্রতি সম্যক দৃষ্টি দিয়ে
নিজের বিভূতি দ্বারাই তাঁদের চালিত করেন। জয় বেদ যজ্ঞের জয়। জয় বেদ ভগবান
শ্রীকৃষ্ণের জয়।।