বেদ যজ্ঞ সম্মেলন=== ২৭/ ০৪/ ২০১৬ আজকের আলোচ্য
বিষয়ঃ--- মানুষের দুঃখের হাত থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আলোচনা ।
[বেদ যজ্ঞ করে আগে জানতে হবে মানুষের দুঃখের কারণ কি ও কিভাবে তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়।]
মানুষ বেদ যজ্ঞ না করার ফলে নিজের জীবন বেদ পাঠ
করতেই ভুলে গেছে। কেনো তাঁর জীবনে
চক্রাকারে সুখ দুঃখ আসছে তা আর সে বুঝে উঠতে পারছে না নিজেকে অমৃতের সন্তান রূপে
না জানার জন্যে। মানুষের দুঃখের এই মূল কারণ তারা অমৃতের সন্তান হয়েও
তারা তাঁকে ছেড়ে অন্যের পুজা বা উপাসনা করে চলেছে তাদের সংসারে লোভে ও মোহে আবদ্ধ হয়ে। সকলেই জানেন এক ঈশ্বর ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপাস্য নেই।
আর সেই ঈশ্বর সর্বত্র রয়েছেন অমৃতময় হয়ে সবার অন্তরে— তিনি সবকিছু শুনছেন—সবকিছুর উত্তর দিচ্ছেন—সবকিছু দেখছেন।
অথচ মানুষ নিজেকে নিজের অমৃতময় হৃদয়
মন্দিরের ঈশ্বর থেকে পৃথক করে রেখেছেন।
ফলস্বরূপ ঈশ্বরের যে গুণগুলি মানুষের হৃদয়ে সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে তা জাগ্রত হচ্ছে
না। বাইরের জগতে তাঁকে খুঁজতে গিয়ে মানুষ বন্ধুহারা ও দিশেহারা হয়ে পড়ছে এবং
প্রকৃত সত্যকে ছেড়ে দিয়ে মিথ্যাকে আশ্রয় করছে। কিছুতেই মানুষ নিজেকে ঈশ্বরের সাথে
এক রূপে ভাবতে পারছে না। তারা অদ্বৈতবাদ ছেড়ে দিয়ে দ্বৈতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করছে নিজ
নিজ অন্তরে। এই ভেদ চিন্তায় মানুষকে দুর্বল করে দুঃখে পতিত করছে।যখনি মানুষ তার
ইশ্বরকে ও নিজেকে এক আত্মা ভাবতে শিখবে তখনি সব দুঃখ চিন্তা দূর হয়ে যাবে। তখন আর
তার নিজের বলতে কিছুই থাকবে না- যা কিছু সবই তাঁর অভিভাবকত্বে হবে। এই চিন্তার ফলে
মানুষের অন্তরে দেবত্বগুনের সমস্ত শাখা-প্রশাখা খুলে যাবে। এ সহজ পথ ছেড়ে দিয়ে
মানুষের মন ছুটে চলেছে বহুত্বের অভিমুখে।এক মুখী চিন্তা বা উপাসনা ছেড়ে দিয়ে মানুষ
ছুটে চলেছে প্রবৃত্তির বসে নিজ নিজ সমাজ সংসার ধর্ম গড়ে তুলতে। আলাদা হয়ে থাকার
মতো দুঃখ বা পাপ আর দ্বিতীয় নাই। এই দুঃখ ও পাপ থেকে মানুষকে মুক্ত করতে পারে
একমাত্র অদ্বৈত্য চিন্তা। এই চিন্তা জাগ্রত হলেই সবায় বসুধার সকলকে আপন আত্মীয় রূপে
দেখতে পাবেন। কারও থেকে নিজেকে আলাদা মনে হবে
না। সবায় হয়ে উঠবেন এক ঈশ্বরের পরিবারের সদস্য।হাজার সম্প্রদায় থাকলেও কোন অমিল
হবে না যদি সেই সম্প্রদায় সাম্প্রদায়িক না হয়। একে অপরের সাথে মিশে পরিচয়ের
মাধ্যমে বৈচিত্র্যের মধ্যে মিলন ঘটাবার জন্য এই সব সম্পদায়ের সৃষ্টি হয়—আবার তা
কালের কবলে বিনাশ হয়ে যায়। কিন্তু সত্যের কোনদিন বিনাশ হয় না। তাই মানুষকে গভীর
চিন্তা করে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। আমি বা আমার সম্প্রদায় বা আমার ধর্ম এক
ঈশ্বর থেকে আলাদা নয়- ঈশ্বরও আমার থেকে আলাদা নন, তিনি আর আমি এক কিন্তু আমি ঈশ্বর
নয়। সূর্য আর সূর্যের কিরণ এক হলেও যেমন সূর্যের কিরণ সূর্য নয়, তেমনি জীব ও শিব
এক হলেও জীব কথনো শিব নয়। সূর্যের অধীনে যেমন সূর্যের কিরণ তেমনি শিবের অধীনে
সমস্ত জীব জগত। আকাশে মেঘ থাকলে যেমন সূর্যের কিরণ প্রকাশ হয়না, তেমনি হৃদিকাশে
অপবিত্র ময়লা জমে থাকলে ঈশ্বরের জ্যোতির প্রকাশ হয় না। তাই অদ্বৈত জ্ঞান হৃদয়ে
প্রতিষ্ঠা করে আগে হৃদয়ের সমস্ত অপবিত্র ময়লা চিন্তা –ভাবনাগুলি দূর করতে হয়। এই
টুকু কাজ করতে পারলেই জীবের অন্তরে শিবের সমস্ত গুণগুলি ফুটে উঠে এবং জীব দেখতে
পায় সে শিবেরই একটা অংশ মাত্র। তখন তার অন্তর এতই নির্মল হয়ে যায় যে সেখানে আর কোন
দুঃখের ছাপ প্রকাশিত হতে পারে না। একটা অনন্ত শক্তির সাথে যুক্ত হয়ে সে সদা
মহানন্দলোকে বিরাজ করে, তাকে এই জগতের কোন দুঃখ স্পর্শ করতে পারে না। সকলে
প্রণাম –সালাম- নমস্কার- প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের বেদ যজ্ঞ সম্মেলনের
সাফল্য কামনা করে আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করছি। হরি ওঁ তৎ সৎ।