[ বেদ যজ্ঞ করে পরিশুদ্ধ হও জীবনের পথ সহজ হয়ে যাবে।]
যত
বেদ যজ্ঞ করবে ততই অন্তর দয়ায় পরিপূর্ণ হতে থাকবে। এই দয়া দিয়েই জীবনকে ধুতে হয়
ঈশ্বরের কৃপা লাভ করার জন্যে। সর্ব অঙ্গের মলিনতা যত পরিশুদ্ধ হতে থাকবে—ততই জীবনে
চলার পথ সহজ-সরল হয়ে যাবে। যতক্ষণ মানুষের মলিনতা ভরা দেহ- মন থাকে ততক্ষণ তার
এব্যাপারে কোন ব্যাথ্যা –বেদনা থাকে না। আর যখনি শুভ্র জ্ঞানের ডালি দিয়ে সে পূজা
শুরু করে তখনি তাঁর ছটপটানি শুরু হয়ে যায়। আর তাঁর হৃদয় কিছুতেই ধুলায় মাখা মলিনতা
ভরা শয্যায় শুতে চায় না। এই ব্যাকুলতাময়
জীবন তখনি দেখতে পায় জ্ঞানের ন্যায় পবিত্র সম্পদ আর দ্বিতীয় নেই ইহলোকে ও পরলোকে।
এই জ্ঞান সম্পদ দ্বারাই মানুষের জীবন পরিশুদ্ধ হয়। অপবিত্র দেহ-মন-বুদ্ধি ও
অহংকারকে জ্ঞান মুহূর্তের মধ্যে পরিশুদ্ধ করে তুলতে সক্ষম। জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে যেমন
যতই কাঁচা কাঠ দেওয়া হউক না কেনো তা মুহূর্তের মধ্যে প্রচণ্ড শিখা নিয়ে জ্বলে ওঠে,
তেমনি যতই পাপী, তাপী, অজ্ঞানী মানুষ হৌক না কেনো একটু জ্ঞানের ছোঁয়া পেলে তার
সমস্ত পাপ, তাপ ও অজ্ঞান চিরতরের জন্যে বিনাশ হয়। ধীরে ধীরে সে জ্ঞানের উচ্চ শিখায়
উঠতে সক্ষম হয়। তাই একমাত্র জ্ঞান-ই পারে মানুষকে দয়াময় করে মানুষের জীবনকে
পরিশুদ্ধ করে তুলতে। যতই ধনী,মানী, বিজ্ঞানী, পণ্ডিত হৌক না কেনো—তাদের অন্তরে যদি
জ্ঞানের শিখা না জ্বলে ওঠে তবে তাদের জীবন পরিশুদ্ধ হয় না পার্থিব জগতের সুখ-
সম্পদের দ্বারা। জীবনকে জ্ঞান দ্বারা পরিশুদ্ধ করার পর পার্থিব জগতের সুখ-সম্পদ-
বৈভবের আসনে বসে থাকলেও সেগুলি আর জ্ঞানীকে স্পর্শ করতে পারে না। রামায়ণে জনক রাজার জীবনী নিয়ে আলোচনা করলেও আমরা
দেখতে পাবো তিনি কিভাবে জ্ঞান দ্বারা নিজের জীবনকে পরিশুদ্ধ করে ধরে রাখতেন জগতের
সবার মঙ্গলের জন্যে। তাই তোমরাও জনক রাজার ন্যায় বেদ যজ্ঞ করে বিশ্বের সবার
মঙ্গলের জন্যে বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী হয়ে সর্বাগ্রে জ্ঞান দিয়ে জীবনকে পরিশুদ্ধ
করে নাও। জনক রাজার ন্যায় অহংশূন্য ও চাহিদাশূন্য হও এই পার্থিব জগতে। ধীর-স্থির
করে নাও নিজের মন ও বুদ্ধিকে। সদা ঈশ্বরের জ্ঞান-বিজ্ঞানের ঘরে বসে গবেষণা করো।
সত্যকে জানো। সত্যকে প্রকাশ করো সুন্দর রূপ দিয়ে। সত্যকে গ্রহণ করো মন-প্রাণে।
সহজ-সরল হও এই জগতে সবার জন্যে। সহজ-সরল জীবন যাপন করো। সহজ সরল জ্ঞানের কথা বলো।
সহজ পাচ্য খাবার খাও। বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম না করে সত্যকে জানার জন্যে সংগ্রাম
করো। সুখ- সম্পদের পিছনে না ছুটে সত্যের দিকে ধাবিত হও। সর্বদা জ্ঞান সাগরে সাঁতার
কাটো ও ডুবরি হয়ে জ্ঞান সাগর থেকে রত্ন উত্তোলন করো—তোমার ঘর সাজানোর জন্যে।
পিতা-মাতা গুরুজনদের সেবা করো—তারাই তোমার সাক্ষাৎ দেবতা। সর্বত্র গড়ে তোলো
বিশ্বমানব শিক্ষা কেন্দ্র ঈশ্বরের পবিত্র জ্ঞান-বিজ্ঞানের ঘর স্বরূপ। সেখান থেকেই
মানুষকে পরিশুদ্ধ হবার আহ্বান করো—পথ দেখাও। সকলের জীবন সার্থক করে গড়ে তোলো----
ঈশ্বরের ঘরের সাথে যুক্ত করে । নিজের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় করো—তাহলেই তার সাহায্য
পাবে এবং পরিশুদ্ধ জীবন লাভ করে অভাবমুক্ত হয়ে উঠবে তাঁর কৃপা লাভ করে। হরি ওঁ তৎ
সৎ।