[ বেদ যজ্ঞ করে শব-সাধনার মাধ্যমে তোমরা শিবত্ব শক্তিকে জাগিয়ে তুলে শিব
হয়ে যাও এই জগৎ সংসারে।]
বেদ
যজ্ঞের ন্যায় শ্রেষ্ঠ যজ্ঞ আর সংসারে দ্বিতীয় নাই এবং মৃত্যু চিন্তার ন্যায় পবিত্র
চিন্তা আর এই সংসারে দ্বিতীয় নাই। মৃত্যু চিন্তায় হলো শব- সাধনা মানুষের জীবনে।
আমরা মৃত্যুকে সাথে করে জন্ম নিই এই পৃথিবীর বুকে। প্রতিনিয়ত জীবের মৃত্যু মিছিল
দেখি কিন্তু নিজের মৃত্যুর কথা চিন্তার মধ্যেই আনতে পারি না। তাই আমরা শব- সাধনা
থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে আর শিবত্ব প্রাপ্তিযোগে নিজেকে স্থির রাখতে পারি
না ও শিব হয়ে ঈশ্বরের সংসার না করে নিজের সংসার করতে গিয়ে নিজের সর্বনাশ নিজেই
ডেকে আনি। শব সাধনার দ্বারাই আমাদের ভারতের সাধক –সাধিকারা জড়ের মধ্যেও প্রাণের
সাড়া পেয়েছেন এবং সেই জড়ের মধ্যেই শিবশক্তিকে দেখতে পেয়েছেন। শব- সাধনা করতে গিয়েই
তাঁরা নিজেক শিব রূপে দেখতে পেয়ে বলে উঠেছেন – যত্র জীব তত্র শিব। শব- সাধনার
দ্বারাই আমাদের মুনি- ঋষিরা মানব জাতির মঙ্গলের জন্যে এই পৃথিবীর বুকে কত নিদর্শন
রেখে গেছেন ও কুটিরে কুটিরে শিবশক্তিকে প্রতিষ্ঠা করে সর্বত্র শিব মন্দির
প্রতিষ্ঠা করে মানব জাতির সনাতন ধর্মকে রক্ষা করার এক অভিনব কৌশল বানিয়ে দিয়ে
গেছেন সহজ সরল পদ্ধতিতে। তাই ভারতের সাধক- সাধিকার চোখে আমরা দেখতে পাই বিশ্বভূপের
এক আনন্দময় ছায়া। শিবসঙ্গী হয়ে সংসার করতে শিক্ষা একমাত্র ভারতীয় দর্শনেই পাওয়া যায়। ভগবান
শিবের সাথে সংসার করতে গিয়েই ভারতীয় সাধকরা সংসারবৃক্ষকেই
অমৃতবৃক্ষে পরিণত করেছেন। এখানেই তাঁরা টেনে এনেছেন স্বর্গ থেকে মা দুর্গা-
সরস্বতী- লক্ষ্মী- কার্ত্তিক ও গনেশকে বিভিন্ন জ্ঞান- গুণ ও কর্মের সমন্বয় ঘটিয়ে।
প্রকৃতির গাছ- পালা- পশু- পাখী সকলের প্রাণে ভাষা দিয়ে সকলকে নিজ সংসারের সদস্য
করে নিয়েছেন এই শব- সাধকরা নিজের তপবলে শিব হয়ে। শবের মাথায় জল ঢেলে তাকে প্রাণবন্ত
করে তোলার সাধনা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে ভারতীয় দর্শন শাস্ত্রে। শব থেকে শিব আর এই
শিব লিঙ্গ অর্থাৎ শিবের প্রাণ থেকেই সবার সৃষ্টি, এই তত্ত্ব কেবল ভারতীয়
দার্শনিকরাই জানতেন। শিব নিরাকার- নির্বিকার থাকেন ততক্ষণ যতক্ষণ না জলের ছোঁয়া
পান। তাঁর মাথায় জল ঢাললেই তিনি নিজের শক্তি নিয়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেন, এই গোপন
রহস্য যারা জানেন তাঁরাই সার্থক সাধক হয়ে সদায় শিবলোকে অবস্থান করেন তাঁর সাথে। ওঁ
সত্যম শিবম সুন্দরম ওঁ নমঃ শিবায়।