[ বেদ যজ্ঞ করে সকলকে জানিয়ে দাও প্রাণ
হত্যার ন্যায় জঘন্য অপরাধ কেউ করতে যেও না।]
মশা কামড়ালে তাকে মারবো না বললেও অজানতেও মারতে
হয়। হাঁটতে গিয়ে কত পোকা-মাকড় মারা যায়। প্রাণ হত্যার অপরাধ করবো না – বললেও
প্রতিনিয়ত হত্যালীলা চলছে। তা হলে কি এই হত্যার অপরাধে মানুষের শাস্তি হবে? মানুষ
ভালো ভাবে জানে কোনটি উপকারী প্রান আর কোনটি অপকারী বা ক্ষতিকারী প্রাণ। ক্ষতিকারক
জীবকে ধ্বংস না করলে পৃথিবীতে কেউ টিকে থাকবে না। তাই ক্ষতিকারক প্রাণ যেগুলি
যেগুলি ঈশ্বরের ঘরের সাথে যুক্ত নয় তাদের হত্যা করা কোনো অপরাধ নয়। তারা কেউ ঈশ্বর
কর্তৃক সৃষ্ট নয়—তারা আপনা থেকেই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করার জন্যে জন্মায় আবার
ধ্বংস হয়ে যায়। যেমন ধান- গমের জমিতে আগাছা কেউ লাগায় না – তা সত্ত্বেও তারা
উৎপন্ন হয়। তেমনি কিছু কিছু প্রাণ প্রাণবন্ত পৃথিবীর ছোঁয়ায় প্রাণ নিয়ে সৃষ্টি হয় –
অন্য প্রাণের ক্ষতি করার জন্যে এবং তাকে সাধধানী ও সচেতন করার জন্যে। গাছপালারও
প্রাণ আছে –তবে কি মানুষ শাক- সবজি খাবে না ? মাছ ডিম মাংস সব কিছুর প্রাণ আছে।
প্রাণ ছাড়া জীবের খাদ্য কোথায়? এখন দেখা প্রয়োজন কোন জীব আমাদের উপকারী প্রাণী –তাদের
যদি নির্বিচারে হত্যা করে খাওয়া হয় ---তবে তো এমন একদিন আসবে সেই প্রাণী পৃথিবী
থেকে লুপ্ত হয়ে যাবে। মানুষ সব প্রাণীর রাজা। তাদের কথাও মানুষকে চিন্তা করতে হবে
নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি- বিবেককে জিজ্ঞাসা করে। একটা গরু মানুষকে যা দান করে নিজের জীবন
দিয়ে—তার ঋণ মানুষ কি কোনোদিন পরিশোধ করতে পারবে? মানুষ বুদ্ধিমান ও সামাজিক জীব
হয়ে যদি নিজের ভালো নিজে বুঝতে না পারে তবে তো পৃথিবী ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে।
কারোও প্রাণ নেওয়ার আগে বুদ্ধিমান জীবকে চিন্তা করতে হবে—সে কি কাউকে প্রাণ ফিরিয়ে
দিতে পারবে? যে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারে না – তার অধিকার নেই কারো প্রাণ হত্যা
করার। তাই মানুষকেই ঈশ্বর উপদেশ দিয়েছেন প্রাণ হত্যার অপরাধ কোরো না। কেবল মানুষ
হত্যা করলেই মানুষের অপরাধ বাড়ে না – ঈশ্বর সৃষ্ট যে কোন প্রাণ হত্যার অপরাধে তাকে
অপরাধী হতে হয়। পৃথিবীর বুকে অনেক মানুষ আছেন তারা তাই সারা জীবন নিরামিষ খাদ্য
খেয়ে জীবন ধারণ করেন। নিরামিষ খাদ্যেও প্রাণের স্পন্দন থাকে তাই সেই খাদ্যও তারা
ঈশ্বরের উদ্দ্যেশে নিবেদন করে কেবল তাঁর উচ্ছিষ্ট প্রসাদ খেয়ে জীবন ধারণ করেন।
যারা প্রকৃত সত্য জেনে বেদ যজ্ঞের মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করেন—তারা সর্বদা ভারসাম্য
রেখে চলার চেষ্টা করেন প্রাণ হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার
জন্যে। হরি ওঁ তৎ সৎ।