[ বেদ যজ্ঞ করে
জীবকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে বিশ্বের ভারসাম্য বজায় রাখো।]
সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে যারা সংগ্রাম করে তারা কখনো কারো প্রতি
আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় না। তারা সদায় রক্ষণশীলতার ভূমিকা অবলম্বন করে
চলে। যারা আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়ে এই পৃথিবীর বুকে চলে তারা নিজেদের অহংকারে
নিজেরাই শেষ হয়ে যায় অকালে। আক্রমণকারী মানুষ কখনো জ্ঞানের জগতে গিয়ে সত্যজ্ঞান
লাভ করতে সক্ষম হয় না। তাই তারা নিজেকে জেনে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার উপায়
বের করতে না পেরে নিজের স্বভাব দোষে অকাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ও পরিবেশ দূষণ করে।
যারা ঈশ্বরমুখী হয়ে চলে তারা সদায় রক্ষণশীল হয়ে সবায়কে রক্ষা করার কৌশল নিয়েই চলে।
এই প্রকৃতির মানুষের বন্ধু স্বয়ং ঈশ্বর হওয়ায় তিনিই তাদের উপস্থিত জ্ঞান-বুদ্ধি
দান করে থাকেন। এখানে যে যত বড়ই শক্তিশালী হয়ে অহংকার দেখাক- বাড়াবাড়ি করুক বেশীদিন
টিকতে পারে না – প্রকৃতির রোষে স্বাভাবিক নিয়মে অকালে শেষ হয়ে যায়। প্রকৃতির উপর
আক্রমণ এলে প্রকৃতি তার স্বভাব বা ধর্ম পালন করে আক্রমণ হানতে বাধ্য হবে।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় এলে অকালে অনেক প্রাণ ঝড়ে পড়ে স্বাভাবিক নিয়মে। এই অকাল মৃত্যুর
ফাঁদ মানুষ নিজের জ্ঞান- বুদ্ধিকে বিপথে পরিচালিত করে তৈরি করে সাময়িক সুখের আশায়।
সবাইকে নিজ নিজ স্বভাব বা ধর্ম অনুসারে চলতে দিলে কেউ কারো প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার
প্রতিহিংসায় জ্বলে উঠতে পারে না। এর ফলে সকলেই অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে
পারে।
যে সব খাদ্য খাবার খেতে মানুষকে নিষেধ
করা হয়েছে, মানুষ যদি নিষিদ্ধ খাবার খায়, তবে অকালে প্রাণ হারাবে নিজ দোষে। ঈশ্বর
তো পৃথিবীর বুকে সবার জন্য খাবার ব্যবস্থা করে দিয়েই সবায়কে সৃষ্টি করেছেন। একটা
গাধা বা ঘোড়াকে ডিম দিলেও তারা খাবে না। যে প্রাণির জন্যে যে খাদ্য ঈশ্বর
নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তাকে সেই খাদ্য খেয়ে-ই অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে
হবে। মানুষ যদি মানুষের খাদ্য না খেয়ে রাক্ষসের খাদ্য খায়, তবে নিজেদের বিপদ তারা
নিজেরাই ডেকে আনবে। কেউ কাউকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে না – নিজেকে
অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার কৌশল অবলম্বন করে প্রতিপদে পদে চলতে হয়। পথভ্রষ্ট না
হলে কারও অকাল মৃত্যু হতে পারে না বা কাউকে অকাল মৃত্যুর ফাঁদে পথভ্রষ্টকারীরা
ফেলতে পারে না। ঈশ্বরের জ্ঞানতরীতে চেপে থাকলে কাউকে অকাল মৃত্যু স্পর্শ করতে পারে
না। সময় হলে তিনি তাঁদেরকে সৎ- সত্য- সুন্দর- জ্যোতির্ময় রূপে নিজের ঘরে তুলে নেন।
এই তুলে নেওয়াকে মৃত্যু বলে না – এই যাত্রাকে বলা হয় অমৃতলোকে যাত্রা। ওঁ শান্তিঃ
শান্তিঃ শান্তিঃ।