[ বেদ যজ্ঞ করে জেনে
নাও জলে- স্থলে- অন্তরীক্ষে যত জীব রয়েছে সবায় এক ঈশ্বরের সৃষ্টি ও তাঁর দাসত্ব
করছে এই অভিনয় মঞ্চে।]
ঈশ্বরের দুটি শক্তির দ্বারা সব জীব প্রকৃতির বুকে স্বাভাবিকভাবে নিজ নিজ
স্বভাব অনুযায়ী উৎপন্ন হচ্ছে আবার শুকিয়ে যাচ্ছে। এই দুই শক্তিই তাঁর জ্ঞান দ্বারা
আবৃত। প্রথমটি হচ্ছে অপরা শক্তি যা জীবের পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়,
মন, বুদ্ধি ও অহংকারের সাথে যুক্ত। এই শক্তির দ্বারাই জীবের অন্তরে বিষয়- বস্তুর
জ্ঞান উৎপন্ন হয়। এই জ্ঞানের সাথে যুক্ত থাকে জীবের কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও
মাৎসর্য। জীব এই বিষয় ও বস্তুর জগতে এসে এদের উপর নির্ভর করেই নিজ নিজ প্রভুর
দাসত্ব অজ্ঞানে করে চলে। মানুষ অন্যান্য জীবের তুলনায় একটু উন্নত হওয়ায় তাঁরা
তাঁদের স্রষ্টার রূপ তাঁর গুণ – শক্তি- বৈভব অনুসারে কেমন হতে পারে তা কল্পনা করে
স্থির করতে পারে। এই কল্পনা শক্তি তাঁর স্রষ্টার দান। তাই এই ব্রহ্মবৃত্তে যা নাই
তা কল্পনা করার শক্তি বা স্বপ্ন দেখার শক্তি কোন জীবের থাকতে পারে না। তাই দেখা
যায় ঈশ্বরের অনন্ত রূপ ফুটে উঠতে থাকে মানব হৃদয় মন্দিরে। এক শ্রেণির মানুষ
অজ্ঞানের অন্ধকারে থেকে নিজেদেরকেই কেবল জ্ঞানী ভেবে নিজেদের স্রষ্টাকেই অপমান করে
চলেছেন--- কিন্তু নিজেদের ভুল নিজেরা কিছুতেই ধরতে পারছেন না। স্বয়ং দেবতারা
ঈশ্বরের নির্দেশে মানব মূর্তিকে ঈশ্বরের নির্মিত মূর্তি জেনে তাঁর নির্দেশে প্রণাম
করলেন অন্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন করে কিন্তু শয়তান কিছুতেই ঈশ্বরের নির্দেশ মান্য করে
মানব মূর্তিকে প্রণাম করলেন না বা নিজ অন্তরের শ্রদ্ধা জানালেন না। তাই এখানে কি
প্রমান হচ্ছে না যারা মানুষকে প্রণাম করেন না শ্রদ্ধা করেন না তাঁরা শয়তানের পথের
অনুগামী ও ঈশ্বর বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে নরক ভর্তি করতে চান। তাঁরা কিছুতেই বিষয় ও
বস্তুর জ্ঞানের ঊর্ধ্বে গিয়ে আত্মিক জ্ঞান লাভ করে এক ঈশ্বরের জ্ঞান- বিজ্ঞানের
ঘরের সাথে সেতু বন্ধন করে মানুষকে স্বর্গে নিয়ে যাবার পথে যান না। স্বর্গ ও নরক
দুটিই ঈশ্বরের ঘর—একটি আলোকিত অপরটি অন্ধকার। সেতু বন্ধন করতেই হবে মানুষকে ঐ দুই
ঘরের যে কোন একটি ঘরে যাবার জন্যে – কারণ এই পৃথিবীটা কারো স্থায়ী বাসভূমি নয়। ওঁ
শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।