[ বেদ যজ্ঞ করে তোমরা অমৃতময় লোকে অধিষ্ঠান করো।]
যারা কর্মত্যাগ- কর্মনাশ- কর্মলয়-
কর্মসন্ন্যাস ইত্যাদির মধ্য দিয়ে পরমেশ্বরকে উপাসনা করেন, তাঁরা অতৃপ্তি- অপ্রাপ্তির অন্ধ
তমসার মধ্যে ডুবে থাকেন। আর যারা সৃষ্টিমূলক বহুবিধ সৎকর্মানুষ্ঠান দ্বারা
পরমেশ্বরের সেবা করেন, তাঁরাও যেন সেই অন্ধ তমসারই মধ্যে ডুবে যান। এত করেও
পরিশেষে তাঁরা দেখেন যে, একচুলও এগোতে পারেন নি। তাই যারা কর্মত্যাগ ও
কর্মানুষ্ঠান এর রহস্য জেনে উভয়কেই মিলিয়ে কেবল পরমেশ্বরের সেবা ও উপাসনা করার
জন্যই উপাসনা ও সেবা করেন—তাঁরাই কেবল কর্মত্যাগরূপ শূন্যতার মধ্যে দিয়ে,
কর্মযোগময় মহাসৃষ্টির অমৃতময় মহাপ্রসাদ লাভ করেন।
তাই এখানে সবায় এসেছেন শ্রদ্ধা- ভক্তি-বিনয়-
নিরহংকার নিয়ে নিজেকে অকর্তা ভেবে মহামিলনের মন্ত্র ও যন্ত্র নিয়ে পরমেশ্বের সাথে
মিলনের তাগিদে। এখানে কেউ যদি কর্মত্যাগ বা সংসারত্যাগ করে মনে করেন, আমি একজন বিরাট
সাধুসন্ন্যাসী হয়ে গেছি, তাহলে তিনি ঈশ্বর উপাসনার নামে অন্ধ তমসাতেই ডুবে থাকেন।
আবার যিনি বড় বড় সৎকর্ম করে মনে করেন, এভাবে আমি খুব জীবসেবা ও ঈশ্বরসেবা করছি—তিনিও
সেই অন্ধকারেই ডুবে থাকেন—এই পৃথিবীর দুঃখকষ্টের লাঘব একবিন্দুও ঘটে না তাঁদের সেই
কর্মের মাধ্যমে। আসলে, আমি হলাম ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অকর্তা, আমার কোনও কিছু করার
সাধ্য এতটুকুও নেই। তিনিই যখন যেটুকু যেভাবে আমাকে দিয়ে করাবেন- তাই আমাকে করতেই
হবে—কারণ তিনিই আমাকে তাঁর সবকিছু দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। এই বোধে যারা কেবল বেদ যজ্ঞ
করে চলেন তাঁকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে তাঁরাই মহাসন্ন্যাসী কর্মত্যাগী
কর্মসন্ন্যাসী হয়ে কেবল কর্মযজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন—এই মহাযোগীদের কোন কর্মফল স্পর্শ
করে না। এরাই কেবল কর্মত্যাগের শূন্যময় মৃত্যুময় লোক থেকে উত্তীর্ণ হয়ে,
মহাসৃষ্টির অমৃতময় লোকে অধিষ্ঠিত হন। হরি ওঁ তৎ সৎ।