[ বেদ যজ্ঞ করে নিজের ছেলে-মেয়েকে সুশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত করার সহজ পথ জেনে
নাও।]
ছেলে-মেয়ের পিতা মাতা সবাই হতে পারে কিন্তু
ছেলে- মেয়েকে সুশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত করতে সবাই পারে না। কেন সব পিতা- মাতা ছেলে-
মেয়েকে সুশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত করে প্রকৃত মানুষ করতে পারে না? অধিকাংশ পিতা –মাতা
ছেলে –মেয়ের জন্ম দেওয়ার জ্ঞান লাভ না করে পিতা –মাতা হয়ে যায়। ফলস্বরূপ তারা আর
সৎকর্মশীল সুশিক্ষিত মানুষ হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবার জ্ঞান ও পরিবেশ পায় না। আমি
কোন সন্তানের জন্ম দিই না। আমি কোন সন্তানের পিতা নই। যারা আমাকে দোষ দেয় তারা সেই
দোষে দুষ্ট। কে তাদেরকে দুর্বল অসৎ জ্ঞানহীন সন্তানের জন্ম দেওয়ার উপদেশ দিয়েছে?
পিতা মাতা হবার উপযুক্ত জ্ঞান আমি সকল মানুষকে দিয়ে থাকি যদি তারা আমাকে বিশ্বাস
করে আমার জ্ঞান-বিজ্ঞানের ঘরের সাথে যুক্ত হয়ে জ্ঞানী উঠে ও আমার উপর নির্ভরশীল
হয়ে আমার নিকট উপযুক্ত বংশধর প্রার্থনা করে। আমি কোন সন্তানের জন্ম দিই না; আমি যে
যেমন সন্তান আশা করে ও নিজেকে আমার উপযুক্ত করে গড়ে তোলে, আমি তেমন আত্মা পাঠিয়ে
দিয়ে সাহায্য করি। আমার সাহায্য না চেয়ে যারা সন্তানের পিতা- মাতা হয় তারা কেউ
আমার প্রেরিত আত্মাকে সন্তানরূপে দেখতে পায় না। তারা সকলেই কামনা –বাসনা যুক্ত
আবদ্ধ আত্মাকে সন্তান রূপে লাভ করে থাকে। এই আবদ্ধ আত্মা দেহ লাভ করে দেহের মধ্যে
আবদ্ধ হয়ে জড়জ্ঞান বুদ্ধি সম্পন্ন হতে পারে কিন্তু মুক্ত মনের মানুষ হতে পারে না।
তারা নিজ আত্মাকে দেহের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখে, নিজ আত্মাকে মুক্ত- বুদ্ধ- শুদ্ধ- সত্তা রূপে
ব্রহ্মাণ্ডব্যাপী সর্বভূতে অবস্থান করছে, তা দেখতে সমর্থ হয় না ও সমদর্শীরূপে
নিজেকে প্রকাশ করে শান্তি, ঐক্য ও সাম্যের জগৎ তৈরীর জ্ঞান লাভ করতে পারে না।
তোমরা যদি সত্যই সন্তানের পিতা-মাতা গুরু
অভিভাবক হতে চাও তবে আগে নিজেকে সত্যজ্ঞানী করে গড়ে তুলে- তবেই সন্তানের জন্ম দাও।
আমার কাছে সন্তানের জন্য প্রার্থনা জানাও—সাহায্য চাও ও সৎকর্মশীল আত্মাকে আমার
জ্ঞান-বিজ্ঞানের ঘর থেকে নিয়ে যাও এই পৃথিবীর বুকে সন্তান রূপে। তোমরা কেউ জ্ঞানী
না হয়ে সন্তানের জন্ম দিতে যাবে না, তাহলেই পৃথিবীতে কোন বিপর্যয় সৃষ্টি হবে না।
শয়তানের বীজ স্বাভাবিক নিয়মে একদিন পৃথিবী থেকে ধ্বংস হয়ে যাবে। মানুষের রক্তে যে
শয়তানের স্রোত চোরাপথে প্রবেশ করছে- তাকে ধ্বংস করার পথ একমাত্র ব্রহ্মজ্ঞান। তাই
আমি বিশ্বমানব শিক্ষা মঞ্চে তোমাদের জন্য সহজ সরল ভাবে ব্রহ্মজ্ঞান অবতীর্ণ করে
চলেছি। তোমরা উপযুক্ত পবিত্র বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী হয়ে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করে সন্তানের
পিতা-মাতা হও দেখবে তাদেরকে সুশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত করতে- তোমাদের কোনরূপ চিন্তা
করতে হবে না। তারা স্বভাবিক নিয়মে ফুল, ফল, সৌরভ নিয়ে বিকশিত হবে এই পৃথিবীর বুকে
নব নব আলো নিয়ে। পিতা-মাতার যদি আমার উপর বিশ্বাস ও আস্থা না থাকে, তবে সন্তানের
আমার প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা কিভাবে জন্মাবে? মানুষ যদি আমার জ্ঞান লাভ করে মানুষ
না হয়- তবে সে বিপরীত ধর্মী হবে স্বাভাবিক নিয়মে।
তাই তোমাদের পুনঃ বলি, তোমরা সমস্ত সংকীর্ণতা ত্যাগ করে পবিত্র বিশ্বমানব
শিক্ষার কর্মী হও। তোমরা আমার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও। আমি তোমাদের পিতা-মাতা –গুরুজন
ও সর্বভূতে অবস্থান করছি জেনে সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও। তুমি যত শ্রদ্ধাশীল হবে
অন্যের প্রতি, অন্যজনও তোমার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। শ্রদ্ধাশীল মন নিয়ে সদা কর্ম
জগতে নেমে কর্তব্য কর্ম করতে শিখো—দেখবে তোমাদের রক্ত থেকে রক্তবীজের বংশধর ধ্বংস
হয়ে যাবে। আর সেই রক্ত থেকে একটাও শয়তান পৃথিবীর বুকে জন্ম নিতে পারবে না। আমি
তোমাদের সৃষ্টি করে আমার ধর্ম –জ্ঞান ও গুণ দান করেছি তোমাদের হৃদয় মন্দিরে
আত্মাকে প্রতিষ্ঠিত করে। এই আত্মার জন্ম ও মৃত্যু নেই জেনে তোমরা আমার জ্ঞানে ও
শক্তিতে ভরপুর হয়ে থাকবে। এই আত্মাই হচ্ছে তোমাদের পুত্র-কন্যা। এই আত্মাকে আমার
জ্ঞান দ্বারা জানতে হয় ও এর উন্নতি ঘটাতে হয়। তুমি যতটা পারলে উন্নতি ঘটালে আমার
জ্ঞান দ্বারা, তারপর তোমার পুত্র- কন্যাকে উপদেশ দিবে আত্মার উন্নতি ঘটাবার জন্য
আমার জ্ঞান দ্বারা এইভাবে তোমরা বংশধর বৃদ্ধি করে আত্মার উন্নতি ঘটাতে থাকবে।
পরিশেষে সময় হলে আমি তোমাদের বংশধরকে পৃথিবী থেকে তুলে নিব সৎ- সত্য- সুন্দর-
জ্যোতির্ময় দেহ দান করে উপযুক্ত মনোরম রাজত্ব দান করে।
তুমি একা সত-সত্য- সুন্দর- জ্যোতির্ময় দেহের মানুষ – দেবতা- জিন- ফেরেশতা –কিন্নর
বা অন্য কোন দেহের জীব হয়ে কি করবে? কাকে নিয়ে আনন্দ করবে ও সুখে বাস করবে? তাই তো
আমি ব্রহ্মাণ্ডের বুকে সপ্তাকাশ বা সপ্তলোক সৃষ্টি করে উনপঞ্চাশটি গ্রহে জীব
সৃষ্টি করে আনন্দলীলা চালিয়ে যাচ্ছি। একটা জীবন্ত গ্রহ মৃত্যু বরণ করলে অপরটি
জীবন্ত হয়ে উঠে আমার ব্রহ্মাণ্ডে। এসব জন্ম- মৃত্যুর খেলা আমার ইচ্ছাধীন। আমি হও
বললেই এই ব্রহ্মাণ্ডের বুকে সবকিছু হয়ে যায়। আমাকে তোমরা বিশ্বাস করলে, আমি
তোমাদের বিশ্বাস করি। আমাকে তোমরা সাহায্য করলে, আমি তোমাদের সাহায্য করি। তোমরা
আমার প্রশংসা করলে আমি তোমাদের প্রশংসা করি। তোমরা প্রতিজ্ঞা কর, তোমরা নিজে
বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী হয়ে নিজের পুত্র- কন্যাদের বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী রূপে
গড়ে তুলবে- তাহলেই দেখবে অতি সহজ পথে তোমরা নিজেদের ছেলে- মেয়েকে সুশিক্ষিত করে
মানব সমাজের বুকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারবে ও জ্ঞানী সন্তানের জন্য গর্ববোধ করতে
পারবে। তোমরা নিজেরা মায়ার সভ্যতা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের সন্তানদের মুক্ত করো-
তাহলেই তোমাদের সন্তানদের আমার সন্তান রূপে দেখতে পাবে। কেউ নিজেকে আমার সন্তান বা
অমৃতের সন্তান রূপে না জানতে পারলে সুশিক্ষিত হয়ে আমার রাজত্বে প্রতিষ্ঠিত হতে
পারে না।