বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—১২/ ০৭/ ২০১৬
স্থানঃ- ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[
বেদ যজ্ঞ করেই বেদের দিব্যধামের পথ নিজেকে বের করতে হবে এবং সেই চেতনার ভূমিতে
সকলকে সঙ্ঘবদ্ধ করতে হবে।]
বেদের দিব্যধামে না পৌঁছেই যারা নিজেকে আধ্যাত্মিক গুরু বলে প্রচার করে
শিষ্য সংগ্রহ করেন এবং নিজেকে ভগবান বলে প্রতিষ্ঠা করেন, তাঁরা কেউ নিজের শিষ্যদের
বেদের আলো দেখিয়ে দিব্যধামে নিয়ে যেতে সমর্থ নন। বাইরের ছদ্ম আবরণের আড়ালে বেদের
যে মূল তত্ত্ব রহস্যটি আছে, সেটি অনেক গভীরতর, অনেক উচ্চতর তত্ত্ব। এই উচ্চস্থানে
বা বেদের দিব্যধামে পৌঁছে কেউ কি আর নিচের সত্য ও চেতনার ভুমিতে নিজের দৃষ্টি
স্থির করতে পারবেন? এই সত্য ও চেতনা তো কেবল এই মর্ত্যভূমিতে নিজের নাম- ধাম
প্রতিষ্ঠার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর ঊর্ধ্বে হচ্ছে ঋষিদের জন্য দিব্যধাম, দিব্যসত্য ও
দিব্যচেতনা, যেখানে আমাদের মানবীয় বুদ্ধির গভীরে যে বোধি আছে, সেই বোধিতে স্থিত
হয়ে অমৃতময় ভুমিতে বিচরণ করে। প্রত্যেক জীবাত্মার আন্তরিক সন্ধান সেই পরমবস্তুর
অভিমুখে। বেদের ঋষিরা ছিলেন সেই পরমবস্তুর পথপ্রদর্শক। তাঁরা সেই পরমোজ্জ্বল পথটি
আমাদের এখনোও দেখিয়ে চলেছেন বেদ যজ্ঞের মাধ্যমে। বেদ যজ্ঞ করেই মানুষকে পরমোজ্জ্বল
ধামে পৌঁছাতে হবে। এই ধামে না পৌঁছানো পর্যন্ত যাত্রা পথের শেষ হবে না। আমরা এই
মর্ত্যভূমিতে কেউ বসে নেই, সকলেই পথ চলছি বিধির নিয়মে। এখানে দুটি পথ সবার জন্যই
ধার্য হয়েছে—একটি বৈদিক পথ অপরটি অবৈদিক পথ। বৈদিক পথ ধরে চললে জীবাত্মা সর্বোচ্চ
ভুমির দিকে এগিয়ে যাবেন, আর অবৈদিক পথ ধরে চললে সর্বনিম্ন ভুমির দিকে এগিয়ে যাবেন।
ঋষির ভাষায় এই পথ দুটিকে বলা হয়েছে—“ ঋতস্য সদনম” ও “ অনৃতস্য ভুরে”। এই সর্বোচ্চ
পথের সন্ধান করতে গিয়েই বিশ্বামিত্র ঋষি গায়িত্রী ছন্দে গাইলেন সবিতা মন্ত্র—“ ভুঃ
ভুবঃ স্বঃ”। এই ভুঃ অর্থে –- পৃথিবী,অতীত, সৎ-কে বুঝায়, ভুবঃ অর্থে –- অন্তরিক্ষ,
বর্তমান চিৎ- কে বুঝায়, এবং স্বঃ অর্থে--
স্বর্গ, ভবিষ্যৎ, আনন্দ- কে বুঝায়। বেদের মাত্র তিনটি শব্দ নিয়ে আমরা যদি যাত্রা
শুরু করি তবে আমরা অনায়াসে পৃথিবী থেকে অন্তরীক্ষে এবং অন্তরীক্ষ থেকে স্বর্গে
যাত্রা করতে পারবো। দ্বিতীয় আমরা অনায়াসে আমাদের অতীত জেনে বর্তমানের কোলে বসে
ভবিষ্যৎ দেখতে পাবো। তৃতীয় আমরা সদায় আমাদের সৎ- চিৎ- আনন্দ স্বরূপ আত্মার
জ্যোতির্ময় রূপের উপর ভর করে এগিয়ে যেতে পারবো। বেদের প্রতিটি শব্দ মূলের সাথে
যুক্ত ও নিত্য সনাতন রূপে উজ্জ্বল। এই সত্য জেনে আমরা যত বেদ যজ্ঞ নির্ভর জীবন পথে
এগিয়ে যাবো ততই সর্বোচ্চ ভূমির বা দিব্যধামের উপর আমাদের দৃষ্টি স্থির করতে সক্ষম
হবো। জয় বেদ যজ্ঞের জয়।