Home » » বেদ যজ্ঞ সম্মেলন-- ১৭/ ০৬/ ২০১৬

বেদ যজ্ঞ সম্মেলন-- ১৭/ ০৬/ ২০১৬



বেদযজ্ঞ সম্মেলনঃ—১৭/ ০৬/ ২০১৬ স্থানঃ- ঘোরশালা* মুর্শিদাবাদ * পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদযজ্ঞ করেই সৃষ্টিরহস্য জেনে পরব্রহ্মের সাথে এক হয়ে নিজেকে মুক্ত পুরুষ রূপে জানতে হবে এবং বিশাল হয়ে বিশালত্বের সাথে থাকার আনন্দ উপভোগ করতে হবে।]
 বেদযজ্ঞই হচ্ছে ধর্মযুদ্ধ – এই ধর্মযুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে জ্যোতি ও অন্ধকারের, সত্য ও অসত্যের, বিদ্যা ও অবিদ্যার, মৃত্যু ও অমৃতত্বের মধ্যে মানুষের অন্তরে সৃষ্টির প্রারম্ভকাল থেকে চলছে। বেদযজ্ঞের কেন্দ্রীয় ভাবনা হল অবিদ্যার অন্ধকারের মধ্য হতে সত্যের জয়সাধন এবং সত্যের দ্বারা অমৃতত্বের জয়সাধন।  বেদ যজ্ঞই হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টির উৎস। এই যজ্ঞ যিনি প্রথম করেছিলেন- তিনিই সবার স্রষ্টা – তিনিই পরম আদিদেবতা—আদিপুরুষ। ঋক বেদের পুরুষসুক্ত বা সৃষ্টিস্তোত্রে এই মহাজাগতিক যজ্ঞের বিশদ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে( ঋকবেদ,১০/৯০)। সৃষ্টির পূর্বে প্রথম যজ্ঞ সম্পাদিত হয়েছিল, সেকারণে যজ্ঞাগ্নিতে আহুতি দেবার কিছু ছিল না, সেজন্য স্রষ্টা বা পরমপুরুষ নিজেকেই আহুতি দিলেন ঐ যজ্ঞে। ঐ যজ্ঞের ঘি হলেন তিনি নিজে। সেই বেদ যজ্ঞ থেকেই চারবেদ, চারবর্ণ, গৃহপালিত ও বন্যপশু সমেত সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের উদয় হল নিজের আত্মাহুতির ফলে। তাঁর দেহের বিভিন্ন বস্তু রূপ পেলো তাঁর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে। ব্রাহ্মণের উদয় হলো তাঁর মুখগহ্বর হতে, ক্ষত্রিয় বাহু হতে, ঊরুদেশ হতে বৈশ্য এবং পদদ্বয় হতে শূদ্র। তাঁর মন হতে চন্দ্রের সৃষ্টি, চক্ষু হতে সূর্য, মুখ হতে ইন্দ্র এবং অগ্নি, এবং শ্বাস –প্রশ্বাস হতে বায়ুর সৃষ্টি হল। তাঁর নাভিদেশ হতে আকাশ, মস্তক হতে মহাকাশ, পদদ্বয় হতে পৃথিবী এবং কান হতে সৃষ্ট হল গতি। এই প্রকারে তাঁর বেদযজ্ঞ হল সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টির উৎস। এই যজ্ঞ বলেই সবার সৃষ্টি করে তিনি সবায়কে আশ্রয় দিলেন নিজের মধ্যে। এক থেকে বহুর সৃষ্টি করেও তিনি একম অদ্বিতীয়ম হয়েই থেকে গেলেন। এই বিশ্বযজ্ঞে তিনি নিজেও বাঁধা রয়েছেন এবং তাঁর সৃষ্টির সকলকে পাশবদ্ধ করে বেঁধে রেখেছেন। যে বাঁধা আছে সেই পশু, তাহলে আমরা সবায় বাঁধা আছি পশু হয়ে—সকলকে সমান দৃষ্টিতে দেখে নিজেকে উপহার দেবার জন্য বা পরার্থে নিজেকে বলি দেবার জন্য। বেদযজ্ঞ করে পরার্থে নিজেকে যিনি সেই যজ্ঞে আহুতি দেন তিনিই তো সবার হয়ে যান। পরমপুরুষ প্রথম নিজেকে পরার্থে যজ্ঞে আহুতি দিয়ে সবার ভগবান- ঈশ্বর- পরমপিতা- আদিদেবতা- আদিপিতা- প্রজাপতি ব্রহ্মা- বিষ্ণু- রুদ্র- মহেশ্বর ইত্যাদি নাম নিয়ে সবার আপন হয়ে রয়েছেন। তিনিই বেদযজ্ঞের মাধ্যমে সবায়কে নিজের আনন্দধামে আকর্ষণ করে চলেছেন কৃষ্ণময় শক্তি নিয়ে। এই পরম মহাসত্য জেনে বেদযজ্ঞে অংশ গ্রহণ করলেই তিনি জীবের অন্তরে জ্ঞানের বাতি জ্বেলে দেন এবং সমস্ত অজ্ঞান- অন্ধকার দূরীভূত করে তাঁকে পবিত্র সত্তায় পরিণত করে নারদীয় শক্তি দান করেন। এই নারদীয় শক্তিই হচ্ছে তাঁর কবিত্ব শক্তি—যে শক্তির দ্বারা সত্যের মহিমা ঘোষণা করে অমরত্ব লাভ করে চিরযুগে তাঁর সান্নিধ্যে থাকা যায়। বেদের ঋষিদের সৃষ্টি তাঁর যজ্ঞ থেকে এই পরম সত্যকে দেখে-- সেই সত্যের জয় ঘোষণা করার জন্য। বেদ হলো সত্যদ্রষ্টা ঋষিদের সেই সত্যের মহিমা যার উজ্জ্বলতা কেউ কোনদিন সামান্যতম মলিন করতে সক্ষম হবে না – ঠিক যেমন কেউ মনে করলেও সূর্যের তেজ ও উজ্জ্বলতা কম-বেশী করতে সক্ষম হয় না।   জয় বেদ ভগবানের জয়।

Facebook CommentsShowHide
Disqus CommentsLoadHide