বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—১৪/ ০৬/ ২০১৬ স্থানঃ ঘোড়শালা*
মুর্শিদাবাদ আজকের
আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদযজ্ঞ করে চলো সংসারে বোকা হয়ে থেকে-- তাহলেই সংসারে
বেদবৃক্ষ রোপন করে সেই বৃক্ষের ফল দিয়ে সবার পূজা করতে পারবে।]
বেদ
যজ্ঞ করার জন্যেই সংসারী হও। সংসারী হয়েও যারা নীরবে
কর্তব্য কর্ম বা
বেদযজ্ঞ করে চলে বোকার ন্যায়, কোনোদিকে নজর না দিয়ে, তারাই জ্ঞানী ও বেদজ্ঞ ঋষি। অগ্নি তেজে ভরপুর হয়ে তাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট হবার ভয় থাকে না। নিজেকে তারা সংসারের বুকে জ্ঞানী বলে পরিচয় দিতে চায় না। সহজ সরল বিশ্বাস নিয়ে বোকার মতো কেবল সকলের সেবা করে যায়। সকলের প্রতি শ্রদ্ধা-প্রেম অটুট রেখে পার্থিব জগতের ঊর্ধ্বে,
তারা একটা জগত তৈরি করে নিয়ে নামে সংসারী হয়ে থাকে। সদা পরমাত্মার সাথে যুক্ত হয়ে
তাঁর সংসারের দাস হয়ে কর্তব্য কর্ম করে চলে পরপারের জীবনকে দেখার জন্যে। এই বোকা
লোকেরা সংসারে বোকা হলেও পরম জ্ঞানী। সহজ সরল কথা বলে, কোনো ঝামেলাই নিজেকে জরিত
করে না। তাদের অন্তরের বিশ্বাস তাদেরকে জ্ঞানী করে তোলে। জাত ধর্ম তাদের কাছে
ভিড়তে পারে না।বড়ো বড়ো পন্ডিতদের কথা তারা বুঝতে পারে না। তারা এতই সহজ সরল যে
ঈশ্বরকে ডাকার সময় পায় না কর্ম করতে গিয়ে। সব কর্ম তাঁর সংসারের জন্য করছে এই
ভাবনাটায় তাদেরকে জ্ঞানী ও মুক্ত পুরুষ করে তোলে। এই সব কর্মযোগীদের অন্তরের বেদ
মুক্ত, তাই তাদের আলাদা করে বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে হয় না। পূর্ণ থেকে তারা পূর্ণ
জ্ঞান নিয়েই আসেন সংসারের অসমাপ্ত কিছু কাজ শেষ করার জন্যে। সংসারের কোনও ক্লেদ
তাদেরকে স্পর্শ করতে পারে না। পাঁকে জন্ম নিয়েও পদ্মফুলের ন্যায় ফুটে ওঠে দেবতার চরণে নিজেকে উৎসর্গ করার জন্যে। নাম ধাম
যশ খ্যাতি কোনো কিছুই এই বোকা লোকদের স্পর্শ করে না। তারা এই সংসারে আসার কারণ
জেনে দু-চারজনকে উপদেশ দেন এবং নিজের জীবন দর্শন দেখিয়ে শিক্ষা দিয়ে যান সংসারী
মানুষদের। সংসারী মানুষেরা তাদেরকে চিনতে পারে না –জানতে পারে না-ভুল বুঝে তাদের
উপর নানা রকম অত্যাচার করে এমনকি তাদের ছলে বলে কৌশলে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হত্যা করার
চক্রান্ত করে। তারা এই ছল-বল-কৌশল বোঝে না- তাই তাদের মৃত্যু হয়েও মৃত্যু হয় না
অমৃতের সাগরে। তারা জন্ম থেকেই জানে সমস্ত জীবনটাই একটা বেদযজ্ঞ তাই আলাদা করে অগ্নিতে ঘি
ঢেলে তাদেরকে যজ্ঞ করতে হয় না। সমগ্র সৃষ্টিটাই একটা মহাযজ্ঞ—পুরুষযজ্ঞ। পরম-
পুরুষ এই মহাযজ্ঞে নিজেকে আহুতি দিয়েছেন –এই সত্য জেনে কেবল তাঁর বিশাল সংসারে
নিজেকে আহুতি দেওয়ার ন্যায় আনন্দ দ্বিতীয় থাকতে পারে না। হরি ওঁ তৎ সৎ।