Home » » বেদ যজ্ঞ সম্মেলন -- ১৩/ ০৬/ ২০১৬

বেদ যজ্ঞ সম্মেলন -- ১৩/ ০৬/ ২০১৬




বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ১৩/ ০৬/ ২০১৬ স্থানঃ ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ *পঃবঃ 
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদ যজ্ঞের প্রাচীনতা ও বেদ সৃষ্টি তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা।]

বেদ যজ্ঞ সৃষ্টির প্রারম্ভকাল থেকে হয়ে আসছে প্রকৃতির বুকে। মানুষ প্রকৃতির সন্তান হয়ে বেদজ্ঞান লাভ করতে থাকে সহস্র সহস্র বছর ধরে বিভিন্নভাবে। বেদ বহু প্রাচীন। কত প্রাচীন বলা সুকঠিন। কতিপয় সত্যদ্রষ্টা ঋষির দৃষ্টি- সম্মুখে উদ্ভাসিত রহস্যপূর্ণ তত্ত্বময় জ্ঞানগর্ভ কয়েক সহস্র মন্ত্রসমষ্টি হচ্ছে বেদ। এই মন্ত্রসকল একই সময়ে অবতীর্ণ হয়নি। কেহ কেহ মনে করেন কয়েক শতাব্দী ধরে ইহা ঋষিদের নিকট এসেছেন। এই মন্ত্রসমূহ দীর্ঘকাল ধরে নানা ভাবে ছড়ানো ছিল। ব্যাসনামা কোন একজন ত্রিকালজ্ঞ দ্রষ্টা পুরুষ মন্ত্র সমুহকে কিছু শৃঙ্খলিত করে চারভাগে ভাগ করে স্থাপন করেন এবং নাম দেন—ঋকবেদ –সামবেদ- যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ। যে সকল মন্ত্র ছন্দে অর্থাৎ পদ্যে ব্যক্ত, সেই সকলের নাম ঋকবেদ। যে মন্ত্র সমূহ শুধু পদ্যে নহে, সঙ্গীতে গীত, তার নাম সামবেদ। যে মন্ত্র ছন্দে নহে, শুধু গদ্যে প্রকাশিত, তার নাম যজুর্বেদ। যে সকল গদ্য পদ্য মিশ্রিত, তার নামকরণ হয় অথর্ববেদ। বেদ যজ্ঞ বিষয়ক, দেবতা বিষয়ক ও অধ্যাত্ম বিষয়ক জ্ঞানের খনি বলে ত্রয়ী নামেও খ্যাত। ঋকবেদে দশহাজার পাঁচশত বাহান্নটি(১০,৫৫২) মন্ত্র আছে। সামবেদে আঠার শো পঁচাত্তরটি (১৮৭৫) মন্ত্র দেখা যায়। যজুর্বেদ ঊনিশশো পঁচাত্তরটি (১৯৭৫) মন্ত্রের সমষ্টি নিয়ে দৃষ্ট হয় এবং অথর্ববেদে মন্ত্রের সংখ্যা পাঁচ হাজার নয়শো সাতাত্তরটি (৫৯৭৭)। চার বেদে মোট মন্ত্র সংখ্যা বিশহাজার তিনশো ঊনাশি(২০,৩৭৯)। সমাহিতচিত্ত ঋষির হৃদয়ে উৎসারিত যে বাণী তাকে বলে ঋক। ঋকগুলি সবই জ্ঞানগর্ভ। অর্ক ধাতু হতে ঋক শব্দ এসেছে। অর্ক ধাতুর অর্থ উজ্জ্বলতা বিধান। জগৎকে আলোকিত করে বলে সূর্যের নাম অর্ক। ব্রহ্মতত্ত্ব – জগৎতত্ত্ব- জীবতত্ত্ব- প্রকৃতিতত্ত্বের মধ্যে সুন্দর সামঞ্জস্য স্থাপন করে বেদ জগৎকে আলোকিত করার জন্য সৃষ্টি একথা স্বীকার করতেই হবে। বেদের রহস্যময় সাগরে অমৃত তোলার জন্য যারা বেদ যজ্ঞ করেন তারাই কেবল সেই সাগর থেকে উজ্জ্বল রত্ন উত্তোলন করে জগৎকে আলোকিত করেন। বেদভুমি ভারতের বুকে বেদ সাগরকে মন্থন করে কত সত্যদ্রষ্টা পুরুষ আমাদের পথপ্রদর্শক হয়ে আছেন তার সীমা সংখ্যা নাই। আমরা যদি এই উজ্জ্বল আলোকে ছেড়ে পার্থিব চাকচিক্যতার মোহে ডুবে থাকি তবে তো পর ধনে লোভে মত্ত হয়ে চিরকাল অন্ধকার জগতে ভিখারী হয়ে পরমুখাপেক্ষী হয়েই থাকতে হবে। তাই ভারতবাসীর কাছে আবেদন—আপনারা ভাবতে শিখুন নিজেকে ভারতরূপে—আপনারা কতপ্রাচীন তা ভেবে দেখুন হিন্দুকুশ পর্বতকে দেখে—আপনারা কত প্রাচীন তা জানুন বেদযজ্ঞ করে বেদের উজ্জ্বলতা বুকে ধারণ করে। এই বেদকে কেন্দ্র করেই প্রাচীন ভারতে ৫১ পীঠের সৃষ্টি হয় – যা মহাকালীর গলায় মালা রূপে দৃষ্ট হয়—তা তো বেদের ৫১ অক্ষর মালা – যা বেদের এক অক্ষর ওঁকার থেকেই সৃষ্টি। জয় বেদমাতার জয়।           

Facebook CommentsShowHide
Disqus CommentsLoadHide