[বেদ যজ্ঞ করে সবায়কে নিজ আত্মার সাথে যুক্ত করে আত্মজ্ঞানী হয়ে সবকিছুর
ঊর্ধ্বে অবস্থান কর।]
মহাভারতের ভীষ্ম আজীবন ব্রহ্মচারী থেকেও
আত্মজ্ঞান লাভ করতে পারেন নি। পরিশেষে কুরুক্ষেত্রের ধর্মযুদ্ধে এসে ভগবান
শ্রীকৃষ্ণের কৃপায় পুরুষবেশধারী শিখণ্ডী নামে এক নারীর সান্নিধ্য লাভ করলেন, তখনি
তাঁর আত্মজ্ঞান হল। তাই কেউ যদি ভাবেন নারীকে বাদ দিয়ে, সমাজকে বাদ দিয়ে, পৃথিবীকে
বাদ দিয়ে, আত্মজ্ঞানী হবেন তপস্যার দ্বারা তাহলে তাঁকে ভণ্ড ছাড়া কিছু বলা যায় না।
যিনি আত্মাজ্ঞানী তিনি ভাল- মন্দ সকলকে ধারণ করে--- সকল কর্মের মাঝে অবস্থান করেন।
কিন্তু তাঁকে কোন কর্ম – ধর্ম – জাগতিক ফল স্পর্শ করতে পারে না। তিনি সব কিছুর
ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন। বর্তমান সভ্যতায় বেদ যজ্ঞ চাপা পড়ে যাওয়ায় মানুষের মানব
ধর্ম চাকচিক্যতার স্তূপে চাপা পড়ে গেছে— তাই আত্মজ্ঞানও মানুষ হারিয়ে ফেলায় সবদিক
থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছে। মানুষ এই সামাজিক ও আত্মিক অবক্ষয়ের কারণে তাঁরা নিজেদের
কাছে নিজেরাই উপহাসের পাত্র হয়ে উঠেছে। আত্মজ্ঞান হারিয়ে ফেলায় মানুষ কিভাবে
কুবুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে নিজের মান-যশ- প্রতিষ্ঠা চোরাপথে এই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত
করতে হয় তার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে নিজের মানব ধর্মকে বাতিল করে এই
চাকচিক্যময় জগতে। এর ফলে মানুষ হয়ে পড়েছে দুর্বল ও দয়ার পাত্র। নিজের জ্ঞান-
বুদ্ধি- বিবেক- শক্তি হারিয়ে পরমুখাপেক্ষী হয়ে আজকের এই বিজ্ঞানের যুগেও মানুষকে
জীবন ধারণ করতে হচ্ছে—এ বড় লজ্জার কথা। ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।