আমাদের প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক ডঃ
আবুল পাকির জয়নুলাবদিন মহাপ্রয়ানে শ্রদ্ধাঞ্জলি
। [জন্মদিন অপেক্ষা মৃত্যুদিন শ্রেয়]
জন্ম মানুষের যেখানেই হোক আর যেদিনই হউক তাতে
কোন কিছু যায় আসে না। মানুষ হয়ে পৃথিবীর বুকে এসে সে কি কর্ম করে গেল সেটাই বড়ো
কথা হয়ে ওঠে। কোটি কোটি মানুষ পৃথিবীর বুকে জন্ম নিচ্ছে পশুদের ন্যায় খাচ্ছে,
নিদ্রা যাচ্ছে দু-চার-দশটা সন্তান সন্ততির জন্ম দিচ্ছে আবার মরে যাচ্ছে। আজ আমাদের কাছে প্রেরণা পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবেন এক দরিদ্র মৎস্যজীবি
পরিবারের সন্তান—যিনি লেখা পড়া চালাবার জন্যে পথে পথে খবরের কাগজ বিক্রী করে
বেড়াতেন। এই দরিদ্র ভারতীয় সন্তান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সন্তানে পরিণত হবেন কেউ ভাবতে
পারেন নি। তিনি কিন্তু তাঁর নিষ্ঠা ও সততার বলে বিশ্বজয়ী হয়ে উঠলেন – ভারতরত্ন
রূপে খ্যাত হলেন। এই সব মহান অন্যদের থেকে আলাদা—তাঁদের মনের জোড় তাঁদেরকে মহান
করে তোলে। আর বাকীরা তারা
কেউ নিজের মৃত্যু দিনের কথা চিন্তা করে কাজ করে না।যদি তারা আগে থেকে
মৃত্যু দিনের কথা চিন্তা করতো তাহলে এই পৃথিবীর
বুকে সকলেই একটা দৃষ্টান্ত রেখে যাবার জন্য সংগ্রাম করতো। কেউ ভাবে না সে তো মারা
যাবেই আর সঙ্গে কোনো কিছুই নিয়ে যেতে পারবে না মৃত্যুদিনে। সেদিন কেউ তার সাথি হবে
না। কেন তাহলে মিথ্যা জীবন গড়ার জন্য সংগ্রাম করবো? মৃত্যুদিন যখন আসবে তখন সেই
দিনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করায় শ্রেয় কাজ। সবাই নিজের জন্মদিন নিয়ে হিসেব কষতে
থাকে- ঘটা করে তা অনেকেই পালন করে কিন্তূ শেষ দিনের পরিণতির কথা ভাবে না। অথচ
মানুষের সেই দিনই হয় নূতন জীবনে যাত্রার দিন। তার এই নূতন জীবন অন্য কেউ দেখতে পায়
না কারণ তা সুক্ষ দেহ ধারণ করে ও অদৃশ্য শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। কে তাকে এই জীবনে
আশ্রয় দেবে? পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়ে মায়ের কোলে আশ্রয় পায় জীব। মৃত্যুদিনে দেহের
অবসান ঘটে আমরা সবাই দেখি- কিন্তূ তার পরিণতি কি হল তা কেউ দেখতে পায় না। সে কোথায়
আশ্রয় পেল, না আশ্রয়হীন হয়ে পড়ল তা দেখার শক্তি দেহধারী জিবের নেই। ঈশ্বর বাইরের
জগত ও জীবের অন্তর জগত দুটিই নিজ শক্তি দ্বারা নিজ অধীনে রেখে পরিচালনা করছেন।
তিনি প্রতিটি জীবের দুই জগতকেই জানেন। জন্ম মৃত্যু সবই তাঁর অধীনে। জন্মদিনে যেমন
তিনি জীবের অন্তরে অবস্থান করেন, মৃত্যুদিনেও তিনি তাকে ছেড়ে যান না। অর্থাৎ বাকি
সবাই তাকে ত্যাগ করে। মৃত্যুদিনে সাথে সাথে হিসেব হয়ে যায় সে কোথায় যাবে এবং
থাকবে। যে যেমন চিন্তা করে দেহ ত্যাগ করেছে- তার পরিণতি তেমনি হবে। যারা এই দিনটির
জন্য অপেক্ষা করে কেবল তাঁরই আশ্রয় কামনা করত-তিনি তো সবই জানেন ও দেখেন-তারা
নিশ্চয় তাঁর ঘরে আশ্রয় পেয়ে যাবে। তাই যারা জ্ঞানীলোক তারা কেবল মৃত্যুদিনের
অপেক্ষায় ঈশ্বরের দাসত্ব করা ছাড়া কিছুই করে না। পৃথিবীতে জন্ম মানেই অভিশাপ। এই
অভিশাপ থেকে জীবকে মুক্ত করতে পারে একমাত্র সন্ন্যাস। সন্ন্যাসী তারাই হয় যারা
ঈশ্বরের দাস হয়ে মৃত্যু দিনের অপেক্ষা করে ও কেবল তাঁর উদ্দেশ্যে কর্তব্য কর্ম করে
চলে। এই মৃত্যুই হচ্ছে ত্যাগ ও মুক্তি। তাই জ্ঞানীরা জন্মদিন অপেক্ষা মৃত্যুদিন
শ্রেয় বলেই জানেন ও তার জন্য অপেক্ষা করেন স্বাধীন ও পবিত্র সত্তা হয়ে ঈশ্বরের
চরণতলে আশ্রয় পাবার জন্যে। আজ তাই দেখতে পাচ্ছি আমরা আমাদের
প্রিয় বৈজ্ঞানিক যিনি ঈশ্বরের জ্ঞান বিজ্ঞানের ঘর থেকে এসেছিলেন আবার তিনি ফিরে
গেলেন সেই জ্ঞানবিজ্ঞানের ঘরে বিশ্বের সকল মানুষকে এক নূতন পথের সন্ধান দিয়ে।