বেদ যজ্ঞে বিশ্বমানব শিক্ষা ধ্বনিতে প্রভু বাজে তোমারি বীণার ঝংকার ।

 [   বেদ যজ্ঞে বিশ্বমানব শিক্ষা ধ্বনিতে প্রভু বাজে তোমারি বীণার ঝংকার।]
 বেদ যজ্ঞে কেন আজ ঘরে ঘরে শুনি শঙ্খধ্বনি—কেন আজ নারী কন্ঠে মঙ্গল ঊলুধ্বনি—কেন আজ আকাশে- বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে আযানের সুমধুর বাণী—তবে কি আজকে আসছেন তিনি—ওই যে রথের চাকার ঝনঝনি—বুকের মাঝে শুনছো কি সেই ধ্বনি। কে গাইছে বলতো আজ সেই মরণজয়ী গান—কে এনে দিল এতো আলো অন্ধকার নগর-গ্রামে-অরন্যে- পর্বতে-তবে কি শুনি প্রিয়ে তাঁর আগমন বার্তা এই ধরার বুকে সেই ধ্বনির মাঝে? তাহলে কি বেদ যজ্ঞের আলো যুগের পরিবর্তনের ডাক দিয়ে চলেছে আকাশে- বাতাসে- অন্তরীক্ষে এই প্রকৃতির মাঝে ?
  না না প্রিয়ে এ আমার মনের ভুল—বিশ্বমানব শিক্ষা রথের চাকা ঘুরছে সেই শব্দটাই আমার কানে ধ্বনিত হচ্ছে—আমার কন্ঠে তো এখনো কেবল তোমার নাম বাজে—মিথ্যা অহংকারের নামটি তো এখনো হৃদয় থেকে যায় নি উড়ে—আমার তো ধূলা-মাটির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ হয় নি। আমি তো ধূলা-মাটির স্বর্গে আঁখিজলের খেলায় ভালবাসি। আমি যেতে চাই না প্রিয়ে দূর- দূরান্তের অন্য কোন দেশে- বিশ্বমানব শিক্ষার জ্ঞান তরীতে পারি দিয়ে। সব পিপাসার হয়নি অবসান এখনো প্রিয়ে—তবু কেন ডাক দেয়—এসো ত্বরা করে- ফেলে দাও সবকিছু না তাকাও ভরা ভান্ডারে—শূন্য হয়ে কি যাব আজ আমি এই ভরা ভাণ্ডার ফেলে?
   ওগো প্রিয়ে আমাকে একা ছেড়ে চলেছো কোথায়—দেখো আমি চেয়ে আছি তোমাদের সবা-পানে। স্থান দাও মোরে সকলের মাঝখানে। কেন বলো তো ছেড়ে
 দিতে চাও মোরে—উলঙ্গ নামহীন গোত্রহীন পরিচয়ে? তব আনন্দ দেখো এখনো আমার অঙ্গে মনে দোলা দিয়ে যায়—কোন বাধা নাহি পায় কোন আবরণে হেতায়-তাই বলি আমারে ছেড়ে দিও না প্রিয়ে একা এই মহাতরঙ্গের স্রোতে—এসো এসো প্রিয়ে পুনঃ তারুণ্যের শক্তিতে ভরপুর হয়ে—খেলা করি অন্তরে অন্তরে নিত্য নূতন সাজে—ছয় ঋতুর মাঝে—দেখো এখনো তোমার অন্তরে সেই আনন্দের মহাসংগীত বাজে। উদার আকাশ- উজ্জ্বল আলোকধারার মাঝে কে তুললো বিচিত্র এক বাণী—বিশ্বমানব শিক্ষা ধ্বনি। সে ধ্বনি আমায় ডাকছে ও বলছে প্রিয়ে—ছিন্ন করো—ছিন্ন করো—আর বিলম্ব নয়—বলো এবার কেবল বিশ্বমানব শিক্ষার জয়।।

বেদ যজ্ঞ করে তোমরা মনের শক্তি নিয়ে জাগ্রত হও বিশ্বমানব শিক্ষা মঞ্চে


[  বেদ যজ্ঞ করে তোমরা মনের শক্তি নিয়ে সবায় জাগ্রত হও বিশ্বমানব শিক্ষা মঞ্চে।]
হে বন্ধুগণ, এক মন হয়ে জাগ্রত হও। অনেকে একস্থানে জমায়েত হয়ে জ্ঞানকে প্রজ্জ্বলিত কর। তোমরা সকলেই এক এক জন দেব-দেবী ও মুনি ঋষি সে কথা ভুলে যেও না বেদ যজ্ঞ করতে এসে তোমাদের শক্তি একত্রিত হলেই সমস্ত অসুর—শয়তান—রাক্ষস ধ্বংস হয়ে যাবে। তোমরা গম্ভীর স্বরে স্বব রচনা কর—আর এমন এক নৌকা তৈরী কর যাতে সকল যাত্রী সেই নৌকায় চেপে ভবসাগর পারাপার করতে পারে। তোমরা তোমাদের অস্ত্রসকল শাণিত ও শোভিত কর। হে বন্ধুগণ ভোঁতা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে যেও নাউৎকৃষ্ট কর্ম অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা কর উজ্জ্বল দিব্য অস্ত্র সহকারে। তোমাদের দেহ হচ্ছে ক্ষেত্র। তুমি হচ্ছো চাষি। মন হচ্ছে লাঙ্গল। দেহের অন্যান্য অঙ্গ –প্রত্যঙ্গ চাষের সহযোগী যন্ত্রপাতিএখন যুগগুলি বিস্তারিত কর, এস্থানে তোমাদের যে ক্ষেত্র প্রস্তুত করা  হয়েছে, তাতে বীজ বপন কর। যে বীজ বপন করবে সেই বীজ শোধন করেছো কি? যদি শোধন না হয়ে থাকে তবে তা জ্ঞান দ্বারা শোধন করে তবেই বীজ বপন করবে।নচেৎ যে বীজ পড়বে সেই বৃক্ষ তোমার ক্ষেত্রে জন্ম নিবে। তুমি কোন অন্নে পরিপূর্ণ হতে চাও—তা তুমি নিজে ঠিক করে নাও। তোমার অভিপ্রায় পূর্ণ করার জন্য তোমার অন্তরে তোমার বিশ্বপিতা অপেক্ষায় রয়েছেন। যেমন ঘাস ভোজন করে গাভী সহস্রধারায় দুগ্ধ দেয়, সেরূপ বিশ্বপিতার ধ্যান তথা বেদ যজ্ঞ  তোমাদের অভিলাষ পূর্ণ করেন। তোমাদের ধন-ধান্যে- জন-অরন্যে ভূষিত করে শোভিত করে তোলেন। তোমরা কেবল সেই দীপ্তিশালী উজ্জ্বল শুভ্র জ্ঞানময় দণ্ডকেই শক্ত করে ধর—সবাই একমন হয়ে জাগ্রত হও – তোমরা পরস্পর বিভক্ত হইও না। যত তোমরা ধ্যান করবে ও একমন নিয়ে চিন্তা করবে তত তোমাদের জ্ঞান বেড়ে যাবে। তোমাদের মনের রূপ হল এই বিশ্বের রূপ।এক মন- এক প্রাণ—এক আত্মা থেকে সকলের সৃষ্টি, তাই কেউ তোমরা আলাদা নও। পশুদের অবজ্ঞা না করে তাদের জন্যে জলপান ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার প্রস্তুত করে দাও তাতে তোমাদের সুখ বৃদ্ধি পাবে।তাদের মনটাকেও বোঝার চেষ্টা করে, তাদেরকে হত্যা করা বন্ধ কর। তোমাদের তৈরী নৌকাতে স্রষ্টার সমস্ত সৃষ্টি যাতে স্থান পায়, তার জ্ঞান অর্জন করে—সকলকে আপন করে নাও। সকলকে রক্ষা করার জন্য সকলকে আহ্বান কর। তোমার আধারকে উত্তমরূপে সংস্থাপন কর। মূলদেশে কুঠারপাত করতে বা এই স্থান খনন করতে যেও না। মন নিয়ে মনন করে যাও। আধারকে ভ্রষ্ট করে ভ্রষ্টাচারে লিপ্ত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড় না। সুখের দাতা হয়ে সুখময় জ্ঞান দান কর, তবেই তোমার আধার দীপ্তিশালী হয়ে থাকবে। এবার সবায় একসুরে বল—জয় বিশ্বমানব শিক্ষার জয়।

বেদ যজ্ঞ করে তোমরা কেবল অন্তঃকরণ পবিত্র রাখো


[ বেদ যজ্ঞ করে তোমরা কেবল অন্তঃকরণ পবিত্র রাখো।]
তোমরা তোমাদের অন্তঃকরণের দিকে চেয়ে দেখো- সেখান থেকেই উৎপত্তি হচ্ছে কুচিন্তা, নরহত্যা করার পাপ চিন্তা, ব্যভিচারের চিন্তা, বেশ্যা গমনের চিন্তা, চৌর্য বৃত্তির চিন্তা, মিথ্যা সাক্ষ্যের চিন্তা নিন্দা ইত্যাদি। এই অন্তঃকরণকে নিয়ন্ত্রণ না করলে এই সব পাপ থেকে মানুষ কিভাবে মুক্ত হবে ? তাই তোমরা সমস্ত অন্তঃকরণ, সমস্ত প্রাণ ও মন দিয়ে তোমাদের ঈশ্বরকেই প্রেম করবে- যিনি তোমাদের হৃদয় মন্দিরে অবস্থান করে তোমাদের সব কার্যকলাপ দেখছেন, সব কথা শুনছেন – তাঁকে ফাঁকি দিতে গেলেই তোমরা নিজেরাই শেষে ফাঁকিতে পড়বে – তখন তোমাদের কিছুই করার থাকবে না। বাইরের জগতের কোনকিছু দ্বারাই তোমাদের অন্তর্জগত পবিত্র হবে না। একমাত্র অন্তর্জগতের সম্পদ ও পবিত্রতা দিয়েই তোমাদেরকে পবিত্র থাকতে হবে। অন্তর্জগত থেকে যত তোমাদের পবিত্র ভাব ভাবনা চিন্তা বের হয়ে আসবে তত তোমরা জ্যোতির্ময় হয়ে উঠবে এবং বাইরের জগতের অপবিত্রতা ও আবর্জনা  থেকে মুক্ত থাকবে। আর যত তোমাদের অন্তঃকরণ বাইরের জগতের সম্পদ আহরণের চিন্তায় মগ্ন থাকবে তত তোমরা আবর্জনার স্তূপে ডুবতে থাকবে।

আমাদের প্রিয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জালি


আমাদের প্রিয় ও শ্রদ্ধেয়  প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক ডঃ আবুল পাকির জয়নুলাবদিন মহাপ্রয়ানে শ্রদ্ধাঞ্জলি                                                                                                             [জন্মদিন অপেক্ষা মৃত্যুদিন শ্রেয়]
জন্ম মানুষের যেখানেই হোক আর যেদিনই হউক তাতে কোন কিছু যায় আসে না। মানুষ হয়ে পৃথিবীর বুকে এসে সে কি কর্ম করে গেল সেটাই বড়ো কথা হয়ে ওঠে। কোটি কোটি মানুষ পৃথিবীর বুকে জন্ম নিচ্ছে পশুদের ন্যায় খাচ্ছে, নিদ্রা যাচ্ছে দু-চার-দশটা সন্তান সন্ততির জন্ম দিচ্ছে আবার মরে যাচ্ছে। আজ আমাদের কাছে প্রেরণা পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবেন এক দরিদ্র মৎস্যজীবি পরিবারের সন্তান—যিনি লেখা পড়া চালাবার জন্যে পথে পথে খবরের কাগজ বিক্রী করে বেড়াতেন। এই দরিদ্র ভারতীয় সন্তান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সন্তানে পরিণত হবেন কেউ ভাবতে পারেন নি। তিনি কিন্তু তাঁর নিষ্ঠা ও সততার বলে বিশ্বজয়ী হয়ে উঠলেন – ভারতরত্ন রূপে খ্যাত হলেন। এই সব মহান অন্যদের থেকে আলাদা—তাঁদের মনের জোড় তাঁদেরকে মহান করে তোলে। আর বাকীরা  তারা কেউ নিজের  মৃত্যু দিনের কথা চিন্তা করে কাজ করে না।যদি তারা আগে থেকে
মৃত্যু দিনের কথা চিন্তা করতো তাহলে এই পৃথিবীর বুকে সকলেই একটা দৃষ্টান্ত রেখে যাবার জন্য সংগ্রাম করতো। কেউ ভাবে না সে তো মারা যাবেই আর সঙ্গে কোনো কিছুই নিয়ে যেতে পারবে না মৃত্যুদিনে। সেদিন কেউ তার সাথি হবে না। কেন তাহলে মিথ্যা জীবন গড়ার জন্য সংগ্রাম করবো? মৃত্যুদিন যখন আসবে তখন সেই দিনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করায় শ্রেয় কাজ। সবাই নিজের জন্মদিন নিয়ে হিসেব কষতে থাকে- ঘটা করে তা অনেকেই পালন করে কিন্তূ শেষ দিনের পরিণতির কথা ভাবে না। অথচ মানুষের সেই দিনই হয় নূতন জীবনে যাত্রার দিন। তার এই নূতন জীবন অন্য কেউ দেখতে পায় না কারণ তা সুক্ষ দেহ ধারণ করে ও অদৃশ্য শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। কে তাকে এই জীবনে আশ্রয় দেবে? পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়ে মায়ের কোলে আশ্রয় পায় জীব। মৃত্যুদিনে দেহের অবসান ঘটে আমরা সবাই দেখি- কিন্তূ তার পরিণতি কি হল তা কেউ দেখতে পায় না। সে কোথায় আশ্রয় পেল, না আশ্রয়হীন হয়ে পড়ল তা দেখার শক্তি দেহধারী জিবের নেই। ঈশ্বর বাইরের জগত ও জীবের অন্তর জগত দুটিই নিজ শক্তি দ্বারা নিজ অধীনে রেখে পরিচালনা করছেন। তিনি প্রতিটি জীবের দুই জগতকেই জানেন। জন্ম মৃত্যু সবই তাঁর অধীনে। জন্মদিনে যেমন তিনি জীবের অন্তরে অবস্থান করেন, মৃত্যুদিনেও তিনি তাকে ছেড়ে যান না। অর্থাৎ বাকি সবাই তাকে ত্যাগ করে। মৃত্যুদিনে সাথে সাথে হিসেব হয়ে যায় সে কোথায় যাবে এবং থাকবে। যে যেমন চিন্তা করে দেহ ত্যাগ করেছে- তার পরিণতি তেমনি হবে। যারা এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে কেবল তাঁরই আশ্রয় কামনা করত-তিনি তো সবই জানেন ও দেখেন-তারা নিশ্চয় তাঁর ঘরে আশ্রয় পেয়ে যাবে। তাই যারা জ্ঞানীলোক তারা কেবল মৃত্যুদিনের অপেক্ষায় ঈশ্বরের দাসত্ব করা ছাড়া কিছুই করে না। পৃথিবীতে জন্ম মানেই অভিশাপ। এই অভিশাপ থেকে জীবকে মুক্ত করতে পারে একমাত্র সন্ন্যাস। সন্ন্যাসী তারাই হয় যারা ঈশ্বরের দাস হয়ে মৃত্যু দিনের অপেক্ষা করে ও কেবল তাঁর উদ্দেশ্যে কর্তব্য কর্ম করে চলে। এই মৃত্যুই হচ্ছে ত্যাগ ও মুক্তি। তাই জ্ঞানীরা জন্মদিন অপেক্ষা মৃত্যুদিন শ্রেয় বলেই জানেন ও তার জন্য অপেক্ষা করেন স্বাধীন ও পবিত্র সত্তা হয়ে ঈশ্বরের চরণতলে আশ্রয় পাবার জন্যে।  আজ তাই দেখতে পাচ্ছি  আমরা আমাদের প্রিয় বৈজ্ঞানিক যিনি ঈশ্বরের জ্ঞান বিজ্ঞানের ঘর থেকে এসেছিলেন আবার তিনি ফিরে গেলেন সেই জ্ঞানবিজ্ঞানের ঘরে বিশ্বের সকল মানুষকে এক নূতন পথের সন্ধান দিয়ে।