বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ- ১৮/ ০৭/ ২০১৬ স্থানঃ-ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[
বেদ যজ্ঞ করে তোমরা জ্ঞানের অহংকার থেকে মুক্ত হও তবেই সন্ত্রাসমুক্ত প্রেমময় মনের
অধিকারী হবে।]
বেদ যজ্ঞ করেই মানুষকে সমস্ত প্রকার অহংকার থেকে মুক্ত হতে হয় এবং সহজ- সরল
প্রেমময় জীবন লাভ করতে হয়। যে সমস্ত মহাপুরুষগণ পরব্রহ্ম পরমেশ্বরের সাক্ষাৎকার
লাভ করেছেন, তাঁদের মধ্যে কিঞ্চিৎ পরিমান অভিমানও পরিলক্ষিত হয় না এই সাক্ষাৎকারের
জন্য। তাঁরা পরমাত্মার অনন্ত অসীম মহিমার সাগরে ডুবে থেকে কেবল এই উপলব্ধি করেন যে
পরমাত্মা নিজেই নিজেকে জানেন। দ্বিতীয় এমন কেউ নেই যে তাঁর সীমা নিরূপণ করতে পারেন। অসীমের সীমা সসীম কি করেই
বা পেতে পারেন? আজ বৈজ্ঞানিক যুগে ধর্ম নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি করছেন তাঁরা কেউ প্রকৃত
সত্যকে জানেন না। এরা যত অহংকার করবে, যত ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে- ততই তারা খারাপ
চালে চলে নিজেদের ধ্বংস নিজেরাই ডেকে আনবে। এদের থেকে অনেক শক্তিশালী জাতি এই
পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে অহংকার দেখাতে গিয়ে। সকলকেই ঈশ্বর একটা নির্দিষ্ট
সময় পর্যন্ত অবকাশ দেন চরিত্রের পরিবর্তনের জন্য। এই সত্য তাঁরা ভালভাবে জানেন
তবুও তাঁরা নিজেদের দলভারী করে অহংকার দেখাতে যান—এটাই হচ্ছে ঈশ্বরের নির্দেশকে
অবমাননা করা ও পথভ্রষ্ট হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। যারা ভাবেন কেবল
আমাদের ধর্ম ও ঈশ্বর কেবল সত্য বাকীদের মিথ্যা তাঁরা প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণরূপেই
ভ্রান্তির বশবর্তী হয়ে রয়েছেন। কারণ ব্রহ্ম- ঈশ্বর- গড- আল্লাহ্ এই রকম জ্ঞানের
বিষয়ই নন। অখিল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে পরব্রহ্ম পরমাত্মার স্বামী কেউ নেই। তিনি
সর্বান্তর্যামী, সকলের স্বামী। সকলে তাঁর দাস, সেবক। তিনি পরম প্রশাসক। তাঁর উপর
প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা অন্যের নেই। তাঁরই শাসনে সকলে চলে। সকলে তাঁর আজ্ঞাবহ।
তাঁর নিয়ন্ত্রণে সব নিয়ন্ত্রিত। তিনি সকলের অধিপতি ও সুশাসক হয়ে কারও অন্যায়
বরদাস্ত করেন না। তিনি নিত্যবস্তু, চেতন, সর্বশক্তিমান সর্বাধার, পরমাত্মা হয়ে—তিনি
একাই অনেক নিত্য চেতন জীবাত্মার কর্ম ফল ভোগের বিধান করেন। জ্ঞানের যত প্রকার
সাধনা আছে কোন সাধন দ্বারাই ব্রহ্মপ্রাপ্তি হতে পারেনা। সুতরাং যারা জ্ঞান নিয়ে-ধর্ম
নিয়ে – জাতি নিয়ে – সম্প্রদায় নিয়ে – দল- মত নিয়ে অহংকার করেন তাঁরা সকলেই অজ্ঞ
হয়ে কেবল মানুষকে ভ্রান্তির পথে নিয়ে যান। যতদিন সে সব ক্ষুদ্র জ্ঞানের অভিমান
থাকে, ততদিন কেউ পরমেশ্বরের সাক্ষাৎ লাভ বা তাঁর আলোর জগৎকে দেখার সৌভাগ্য লাভ
করতে পারেন না। যাদের মধ্যে জ্ঞানের অভিমান বিন্দুমাত্রও নেই, কেবলমাত্র সেই
ভাগ্যবান মহাপুরুষগণেরই পরমেশ্বরের সাক্ষাৎকার লাভ হয়। তাই যারা পড়েশুনে ধর্মগুরু
হয়ে ধর্মের কথা প্রচার করেন ও নিজেকে ব্রহ্মজ্ঞানী ভাবেন তাঁরা এই ব্রহ্মবিদ্যাকে
পরিহাস করেন এবং নিজেই নিজেকে উপহাসের পাত্র রূপে তুলে ধরে পরবর্তীতে প্রবঞ্চক
রূপে গণ্য হন। জয় বেদ যজ্ঞের জয়।