বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—১৭/ ০৭/ ২০১৬ স্থানঃ –ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[
বেদ যজ্ঞই পারে দেবতা ও স্বর্গের সাথে সেতু বন্ধন করে এই অগ্নিগর্ভ পৃথিবীকে রক্ষা
করতে।]
বেদ যজ্ঞ করেই এই পৃথিবীকে আলোকিত করে রেখেছিলেন বৈদিক যুগে মুনি –ঋষিরা।
তাঁরা জানতেন অগ্নি নিখিল প্রাণময় জগতের তেজঃশক্তি। তাই অগ্নির আর এক নাম
‘জাতবেদা’, বিদ্যার জন্মদাতা বা জ্ঞানযুক্ত হয়েই জাত। অগ্নি একটি পাবক বা
পবিত্রকারী সেতু, মানবত্ব ও দেবত্বের মধ্যস্থলে। অগ্নি পৃথিবীর নাভি আবার অমৃতেরও
নাভি।( ঋক বেদ ৩/ ১৮/ ৪)। আজ অগ্নির উপরেই দাঁড়িয়ে বৈজ্ঞানিক মানব সভ্যতা। অগ্নি
থেকেই সৃষ্টি বিদ্যুৎ আর বিদ্যুৎ থেকেই সৃষ্টি বৈজ্ঞানিক সভ্যতা। যে অগ্নি মানুষকে সভ্যজাতিতে পরিণত করেছে—পশুদের থেকে
আলাদা মর্যাদা দান করেছে, আমরা যদি তাঁর মর্যাদা রক্ষা করতে না পারি তবে তো
আমাদেরকে তাঁর ক্রোধে পড়ে ধ্বংস হতেই হবে। আজ সারা বিশ্বের সমস্ত দেশ পারমানবিক
বোমা নিয়ে ও আগ্নেয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে যেভাবে আস্ফালন করছেন, তাতে তো তাঁরাই এই
শান্ত পৃথিবীকে অগ্নিগর্ভে নিমজ্জিত করতে চলেছেন ও প্রাণের খেলা চিরতরের জন্য বন্ধ
করতে চলেছেন। বেদে কেনো পৃথিবীর সমস্ত শাস্ত্রগ্রন্থে অগ্নিকেই প্রাধান্য দিয়ে
তাকেই যোগাযোগ রক্ষাকারীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বেদে যজ্ঞ মানেই অগ্নি—অগ্নি ছাড়া
কোন যজ্ঞ হয় না। তাই যেকোন উন্নয়নের মূলে রয়েছে অগ্নির ভূমিকা। বেদে যজ্ঞকে বলা
হয়েছে পার্থিব এবং অপার্থিব বস্তুলাভের নিশ্চিত উপায় – কিন্তু এই অগ্নির উপর নির্ভর
করেই। অগ্নির প্রভাবে আমরা সমস্ত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অভীষ্ট ফল লাভ করে থাকি।
একটু গভীরে গেলেই আমরা দেখতে পাবো বেদ যজ্ঞের মাধ্যমে যোগসুত্র স্থাপিত হয়েছে
মানুষ ও দেবতায়, স্বর্গ ও পৃথিবীতে, দৃশ্য ও অদৃশ্য জগতের বস্তুতে। এই বেদ যজ্ঞের
মাধ্যমেই যাজ্ঞিক, যজ্ঞের পুরোহিত, দেবতা এবং স্বর্গ – একে অন্যের নিকটবর্তী হয়ে
রয়েছে যুগ-যুগান্তর ধরে। তাই বেদ যজ্ঞই পরমপ্রাপ্তির একমাত্র সহায়ক। এই যজ্ঞই
মানুষকে নিয়ে যায় উত্তাল জলতরঙ্গ পার করে এক অনাবিল শান্তির তটে। বেদে যজ্ঞকে
সর্বজীবের ও দেবতার আত্মা বলা হয়েছে। তাই বেদ শিক্ষা দিয়েছে—একমাত্র যজ্ঞ দ্বারাই
পৃথিবী সুরক্ষিত থাকে, এই যজ্ঞই হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রাণস্বরূপ। যজ্ঞ
মানুষের কামনা- বাসনা- ক্রোধকে নিয়ন্ত্রিত করে মহাজাগতিক কর্মধারার সাথে তাঁদেরকে
যুক্ত করে নিয়ে সমস্ত জগতের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং পৃথিবীকে সবার উপযুক্ত বাসভূমি
রূপে সুরক্ষিত রাখে। বেদে এই মহাজাগতিক কর্মধারাকে ঋতম বলা হয়। ঋতম শব্দের অর্থ
হলো সত্য। তাহলে আমরা আমাদের সত্যকে রক্ষা করতে পারি একমাত্র বেদ যজ্ঞের মাধ্যমে
এবং এই সত্য দ্বারাই আমরা আমাদের বাসভূমি – কর্মভূমি ও জ্ঞানপীঠকে রক্ষা করতে
পারি। জয় বেদ যজ্ঞের জয়।