বেদ যজ্ঞ
সম্মেলনঃ—০১/ ০৭/ ২০১৬ স্থানঃ—ঘোড়শালা*
মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদ যজ্ঞ করে অগ্নিতে
তোমাদের চিন্তা- ভাবনা আহুতি দিয়ে তাঁর আশ্রয়ে থাকো তাহলেই বৃহৎ হয়ে দেবতাদের ধনে
ধনী হবে।]
বৈদিক ঋষিরা
যেকোন যজ্ঞ করে সবকিছু অগ্নিতে আহুতি দিতেন। অগ্নির ন্যায় পবিত্র ও বিশ্বময় বৃহৎ
সত্তা আর দ্বিতীয় নাই। আমরা ক্ষুদ্র হলেও সবায় তাঁর সাথে যুক্ত। ক্ষুদ্র সত্তা
বৃহতের সাথে যুক্ত হলে সেও বৃহৎ হয়ে যায় এবং বৃহৎ হয়ে বৃহতের সব স্বাদ গ্রহন করতে
থাকে। তাই আমরা অতি সহজ সরল পথে অগ্নির আশ্রয়ে বৃহৎ হতেই পারি। আমরা অগ্নির আশ্রয়ে
গিয়ে বৃহৎ হলেই সকল দেবতাদের ন্যায় আর ক্ষুদ্র থাকবো না। ক্ষুদ্র দেহের মধ্যেও
আবদ্ধ থাকবো না। দেবতারা যা করতে সক্ষম আমরাও তা অতি সহজে করতে সক্ষম হবো। দেবতারা
যজ্ঞাগ্নি থেকে উৎপত্তি হয়ে অগ্নির আশ্রয়েই থাকেন এবং অগ্নির মাধ্যমেই সবকিছু
তাঁরা গ্রহণ করেন। তাই আমাদের অগ্নির আশ্রয়ে থাকাই শ্রেয়। অগ্নি কত প্রাচীন দেবতা
তা কেউ জানেন না। বেদের যুগে ঋষিরা অগ্নির পূজা করতে গিয়ে বলেছেন—আমরা যে অগ্নির
আরাধনা করছি তা প্রাচীনদিগের আরাধনার পথ অনুসরণ মাত্র। বেদে অগ্নিকেই সর্বোত্তম
রত্নদাতা বা ধনাদাতা বলা হয়েছে। অগ্নির কৃপায় আমরা সর্ববিধ ধন পাই। তাই বেদে ঋষিরা
বলেছেন—যদি ধন ইচ্ছা কর, তা হলে অগ্নির শরণ লও। ‘রয়ি’ ‘রায়’, ‘বসু’ ‘ভগ’ ইত্যাদি
রত্ন বা ধনের প্রতিশব্দ। ‘রয়ি’ বা ধন বলতে পার্থিব ও অপার্থিব ধন দুইই বুঝায়। ধন
শব্দের অর্থ – যা আনন্দ দেয়, “ধিনোতীতি ধনম”। পার্থিব ধন অগ্নি দান করেন, তা তো
আমরা বর্তমান বৈজ্ঞানিক যুগে প্রত্যক্ষ দেখতে পাচ্ছি। পৃথিবীতে বিদ্যুতের সাহায্যে
সভ্যতার যে গতিময়তা তার মূলেই অগ্নি। অগ্নি বা বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে গেলে ধনাগমের পথ
রুদ্ধ হয়ে পড়বে। এই ধন অতি তুচ্ছ ঋষিদের কাছে। এতো দিনে দিনে ক্ষয় প্রাপ্ত হয়। বেদের মন্ত্রে যে ধনের
কথা বলা হয়েছে তা দিনে দিনে প্রতিদিন প্রতিক্ষণে বর্ধনশীল। অগ্নির নিকট থেকে
প্রাপ্ত ধনে আমাদের চেতনায় ভগবৎ আবেশের স্রোত প্রবাহিত হয়। এই স্রোত একবার
প্রবাহিত হতে শুরু করলে আমরা আমাদের ক্ষুদ্র চেতনা থেকে মুক্ত হই এবং বিশ্বের বিপুল চেতনার সাথে
যুক্ত হই। এই ‘রয়িং’ পদে বিপুল আনন্দ, যা সমুদ্রের মত আমাদেরকে দশদিকে বিস্তৃত করে
ঘিরে আছে। যে সম্পদ পেলে আমরা ভুমার সন্ধান পাই, তাই ‘রয়ি’। এই ধন অক্ষয়। তাই
বেদযজ্ঞ করে তোমরা আগে অগ্নির নিকট থেকে এই অক্ষয় ধন লাভ কর। জয় বেদ যজ্ঞের জয়।