আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদ যজ্ঞ করে যত
ঈশ্বরের গুণগান করবে ততই তাঁর মাধুর্য তোমার মধ্যে প্রকটিত হবে।]
“ কৃষ্ণের মধুর
রূপ শুন সনাতন। যার এক কণ ডুবায় সব ত্রিভুবন।। এই বেদ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজের
ভগবতসত্তার মাধুর্য নিয়ে সবার চিত্ত আকর্ষণ করে চলেছেন। তাঁর রূপের শেষ নেই। তিনি
নিজের রূপের মাধুর্য সকলকে দিয়ে চলেছেন এবং নিজের দিকে আকর্ষণ করে চলেছেন। এই সত্য
নিরাকারের উপাসকগণ জানে না- তাই তাদের কাছে ঈশ্বরের মাধুর্যময় রূপ ধরা পড়ে না।
তাদের কাছে তিনি অব্যক্তই থেকে যান। বৈদিক উপাসনার পরিণতি ঈশ্বরের জ্যোতি দর্শন।
এই জ্যোতির মধ্যেই ঈশ্বরের বিশ্বরূপ বা ব্রহ্মরূপ বৈদিক ঋষিরা দর্শন করতেন এবং এক
ব্রহ্মের মধ্যে কোটি দেবতার সমাবেশ দর্শন করে তাঁর বিভিন্ন রূপের গুণগান করতেন, যা
আমরা বেদের বিভিন্ন মন্ত্রে পেয়ে থাকি। অনেকের ধারণা বেদে নিরাকার ব্রহ্মের
উপাসনার কথা বলা হয়েছে, এই প্রচলিত ধারণা ভিত্তিহীন ও অমূলক। বেদের ঈশ্বরের রূপ –
রঙ- গুণ- মাধুর্য –ঐশ্বর্য কোনকিছুর অভাব নেই। শ্রীভাগবত শাস্ত্রানুসারে,
শ্রীভগবান সৃষ্টি করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে প্রকৃতিকে দায়িত্বভার দিয়ে নিজে নিদ্রিত
হলেন। প্রকৃতি একের পর এক সৃষ্টি করে জীবকে বললেন—পরমপিতাকে ডাকো। কারও ডাক সফল হল
না। পরিশেষে পরমপুরুষের ছকে অর্থাৎ তাঁর রূপানুরূপে মানব সৃষ্টি করলেন, মানবের
ডাকে তিনি জেগে উঠলেন। প্রকৃতির সৃষ্টি এখানে সফল হল। পবিত্র বাইবেলে অনুরূপ
উক্তির পরিষ্কার সমর্থন পাওয়া যায়।“ God
made man after his own image”. তাই ঈশ্বরকে তাঁর ব্রহ্মরূপের যে কোন রূপে উপাসনা
করলেই তাঁর জ্যোতি দর্শন হয়। যা কিছু বর্তমান, যা অতীত ও যা ভবিষ্যৎ সবকিছুই সেই এক পরম পুরুষের জ্যোতির্ময় পাত্রের মধ্যেই আবৃত
আছে। গুরু- পিতা- মাতা যেমন ব্যক্তিসত্তা হয়ে আমাদের কাছে সাকার বিগ্রহ; অনুরূপ
আমাদের অন্তরের ভগবান- পরমেশ্বরও সাকার বিগ্রহ। তাঁকে আমরা যখন যে গুণে ও পোশাকে
দেখতে চাই তখন তিনি সেই রূপ ধারণ করেই আমাদের দর্শন দিয়ে থাকেন। তাঁর বিভুতি দেহ
সব চিদাকার হয়ে প্রকাশ পায় ভক্তের কাছে। ব্রহ্মের সত্তা, স্বরূপ ও দেহ সবই চিন্ময়
ও অপ্রাকৃত, কিছুই প্রাকৃত বা প্রকৃতির বিকারজ নয়। তাই মানুষ যেভাবেই ঈশ্বরের
উপাসনা করুক না কেন, তার মধ্যে একটা রূপের ভাবনা বা ছাপ এসে পড়বেই—কারণ কোন নাম
ধরেই তো ঈশ্বরকে ডাকতে হয়। রূপ বা আকার না থাকলে কোনকিছুর নাম দেওয়া যায় না। আর
নাম ধরে না ডাকলে কেউ ডাকে সাড়া দিতেও পারে না। তাই যিনি স্বপ্রকাশক, দেবগণের আদি,
জন্মরহিত, সর্বব্যাপী পুরুষ, তিনিই পুরুষোত্তম- তিনি নিত্য বিগ্রহ হয়ে সনাতন
ধর্মের রক্ষক ও চিরন্তন পুরুষ হয়ে আমাদের চিত্তকে আকর্ষণ করে চলেছেন মহাকাশের দিকে—যেখানে
ওঁ কারের রাজত্ব। সেই চিত্ত আকর্ষক ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিত্য সনাতন রূপকে অস্বীকার করলে, কে
তাঁর মাধুর্য লাভ করে জ্যোতিঃ দর্শন করবে? জয় বেদ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়।