বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—২৯/ ০৬/ ২০১৬ স্থানঃ—ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ* পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ [
বেদ যজ্ঞের মাধ্যমে কল্যাণময়ী ঊষার সাথে নিজ জীবনের সম্পর্ক গড়ে তোলো—তাহলেই দিব্য
জাগরণ ঘটতে থাকবে ও সমস্ত অন্ধকার দূর হয়ে যাবে ঊষার সান্নিধ্যে থেকে।]
ঊষার উদয়কালে বেদের সমস্ত ঋষিগণ
বেদযজ্ঞের মাধ্যমে ঊষার আরাধনা করতেন এবং
তাঁর স্তবগান রচনা করতেন। ঊষা সুন্দরী। তিনি জ্যোতির প্রকাশিকা। তিনি যখন উদিত হন
আকাশ হয়ে উঠে সমুজ্জ্বল। মনে হয় বিশ্বের প্রাণ আর জীবন তাঁরই মধ্যেই ছিল। তাঁর
উদয়ে সবায় নব জীবন লাভ করে বেড়িয়ে এলো। তিনি সকল জ্যোতির শ্রেষ্ঠ জ্যোতি। ঊষা
কল্যাণময়ী নারীর মত ব্যক্ত হন ঋষিদের হৃদয় রাজত্বকে জড়িয়ে। ঋকবেদে সূর্য হলেন পরম
সত্যের প্রতীক, সুতরাং ঊষার সাথে সত্যের সম্পর্ক অতীব নিকট। ঊষা জাগরণের প্রতীক।
কেবল প্রাত্যহিক ঘুম থেকে জাগরণ নয়—এ জাগরণ দিব্য জাগরণ; ঊর্ধ্বমুখে ছুটে চলার
জন্য আত্মার জাগরণ। দিব্যধামের আলো দ্বারা সব কিছু উজ্জ্বল করে তোলাই ঊষা দেবীর
কাজ। এই দৃষ্টিতেই আধ্যাত্মিক জগতের ঋষিগণ ঊষা দেবীকে দর্শন করতেন। বিশ্বামিত্র
ঋষি ঋক বেদের মন্ত্রে বলেছেন—ঊষার আলোতেই বরুণের ব্যাপ্তি ও বিশালতা, মিত্রের
মাধুর্য ও সুসঙ্গতি বিরাজ করছে। ঊষার আবির্ভাব কালকে ব্রাহ্মমুহূর্ত বলে। এই
ব্রাহ্মমুহূর্তে ব্রহ্মের ভাবে বিশ্বসংসার ভাবিত হয়। তাই যত সাধক, মহাপুরুষ, যোগী,
মুনি,ঋষি ঐ মুহূর্তে স্ব-স্ব আরাধ্য দেবতার ধ্যানে, স্মরণে নামগুণকীর্তনে নিমগ্ন
থাকেন। সর্বত্র শুদ্ধ পবিত্র ভাব বিরাজ করে। আমরা নিত্য ২৫/৩০ মিনিট কাল ঊষাকে
দেখি। এতটুকু সময় মাত্র ঊষাকে দর্শন করে বেদে ঊষার যে রূপলাবণ্যের বর্ণনা ঋষিরা
দিয়ে গেছেন তাতে মনে হয় তাঁরা ঊষাকে অনেক সময় ধরেই দেখার সুযোগ পেতেন। উত্তর মেরু
২৫ হাজার বছর অন্তর উষ্ণ হয়ে উঠে, তখন সূর্য পৃথিবীর দিকে হেলে যায়। সেই সময় উত্তর
মেরুমণ্ডল মানুষের সাধনার ক্ষেত্র হয়ে উঠে এবং সেখানে ঊষা দীর্ঘকাল স্থির থাকে।
তাই অনেকের মতে বেদের ঋষিরা একসময় উত্তর মেরুমণ্ডলে বাস করতেন। যাহৌক আমরা যেটুকু
সময় পাই সেই সময় টুকুই যদি কাজে লাগাতে পারি তবেই আমাদের দিব্যজাগরণের জন্য
যথেষ্ট। জয় বেদযজ্ঞের জয়।