বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—২৯/ ০৫/ ২০১৬ আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ ----[ বেদ যজ্ঞ করে নিজেকেই তন্ন তন্ন করে খুঁজে পরমপিতার সান্নিধ্য লাভ করে তাঁর মুল্যবান উক্তির প্রকাশ ঘটাও নিজের জীবনে।]
বেদ
যজ্ঞ শুরু করে দাও তাহলেই দেখবে এতদিন ধরে মনের সংগোপনে
যাকে তুমি খুঁজছো তাঁকেই পেয়ে যাবে অতি সহজে তোমার পবিত্র
পুরী ধামে। তিনিই অপেক্ষা করছিলেন এই পুরী ধামে তোমার জন্যে যুগ যুগান্তর ধরে।
তাঁর দিকে চেয়ে
দেখো—তাঁর রস থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে কাব্য সাহিত্য—তাঁকে নিয়েই
তৈরি হচ্ছে দর্শন—তাঁকে ঘিরেই তৈরী হচ্ছে
বিজ্ঞান—তাঁকে নিয়েই তৈরী হচ্ছে
ইতিহাস—তাঁকে ঘিরেই সৃষ্টি হচ্ছে নব নব ভাষা – নূতন
নূতন শব্দ—তাঁকে ঘিরেই তৈরী হচ্ছে বাস্তব জীবনের প্রয়োজনীয় অংকের ছাঁচ—তাঁকে ঘিরেই পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন
সভ্যতা—আবার তাঁকে ঘিরেই একদিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে সমস্ত
সৃষ্টি। তাঁর জন্যই তোমার
জপ-তপ-সাধনা- মঠ- মন্দির। একবার ভেবে দেখেছো কি—তিনি কে? তিনি সেই আমি যিনি তোমার এই দেহ পুরীতে মহাসাগরকে ঘিরে অবস্থান করছেন।
এই পরম
করুণাময় পরমপিতা যিনি জগতের নাথ—জগন্নাথ রূপে খ্যাত, তিনি কিন্তূ তাঁর সবকিছু
নিজের কাছে রেখেছেন, হাত দুটি ছাড়া। তাঁর কর্মের প্রতীক হাত দুটি আমাদের দিয়ে
আমাদের কর্মভূমিতে পাঠিয়েছেন, তার নির্দেশিত কর্ম করার জন্য। যিনি সব্যসাচীর ন্যায়
দুই হাতেই সমানভাবে তাঁর নির্দেশিত কর্মের তীর নিক্ষেপ করতে পারেন তিনিই তো তাঁর
প্রিয় শিষ্য, প্রিয় ভক্ত। এই ক্ষাপাকে তোমরা কেউ
চিনবে না – সে কত বড় ভক্ত ও যোগী তা একমাত্র তিনিই জানেন। তাই প্রভু জগন্নাথ বললেন;-- বেদ যজ্ঞকারী ব্রহ্মজ্ঞানীদের ধরা মুশকিল। তাঁরা সহজে নিজেকে
প্রকাশ করতে চান না। তাঁরা যেন মেঘে ঢাকা সূর্য। তাঁদের চিনে নিতে হয়।
এই বেদ যজ্ঞকারী ক্ষাপা পরমপিতা জগন্নাথদেবের শ্রীচরণপদ্মে লুণ্ঠিত হয়ে বললেন;- পিতা আমি তো সর্বদা নিজেকে সকলের চেয়ে
শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করার জন্যই বেদ যজ্ঞ করে চলেছি এবং এই বেদ যজ্ঞের মাধ্যমেই
মহাসত্যকে তুলে ধরার জন্য কাজ করে চলেছি এতকাল ধরে। আমার তো মনে হতো বেদ যজ্ঞ করে সকলের মাঝে নিজেকে শ্রেষ্ঠ রূপে প্রকাশ করাটাই মানুষের ধর্ম। তাতেই ধর্ম,
অর্থ, মোক্ষ- কাম সবকিছু মানুষ লাভ করতে সমর্থ।
পরমপিতা জগন্নাথ তাঁর কথা শেষ হতে না হতেই তাঁর মনের কথা জেনে নিয়ে সস্নেহে নিজের বুকে টেনে
গালে এক থাপ্পর দিয়ে বললেন;-- “ নিজেকে প্রচার করে আর বৃথা সময় নষ্ট করবে না। যতটা
পারবে নিজেকে আড়াল করে রেখে সকলের মঙ্গলার্থে সাধনা [কর্ম] করে যাবে। তাতে ফল ভাল
হবে। যেমন গাছে যে আমটা কারও চোখে পড়ে না সেই আমটা স্বাভাবিকভাবেই সবথেকে পুষ্ট
হয়ে ভালভাবে পাকে এবং তার সৌন্দর্য ,সৌগন্ধ ,সুস্বাদ সকলকেই আকৃষ্ট করে। তেমনি কেবল বেদ যজ্ঞ করে চলো- এতে কি ফল হবে না হবে কোন চিন্তায় করতে যাবে
না। তুমি কত জন্মের সাধনার ফলে বিশ্বমানব শিক্ষা সুত্র পেয়ে বেদ যজ্ঞ করার অধিকার
পেয়েছো এ তোমার এক জন্মের ফল নয়। বহু জন্ম পার হয়ে গেছে তোমার এই সাধনার ফল পেতে—সাধারণ
মানুষ তা বুঝতে পারবে না। “ আমি জগতের নাথ হয়ে জগন্নাথ হয়ে তোমাকে বলছি — মনের সংগোপনে কেবল বেদকে ধারণ করে বেদ যজ্ঞ করে যাও-
তোকাকে কোন সাধু –সন্ন্যাসী হতে হবে না – যে মনের সংগোপনে বেদের সাধনা করে চলে সেই সাধু। বেদের সাধনায় মানব জীবনের মহামুলমন্ত্র। বেদ যজ্ঞ করে সাধনা করে যাও সব পেয়ে যাবে, সব বুঝতে
কি পারবে। আমাকে জানার জন্য তোমার জীবনে কোন ফাঁক ফোঁকর
থাকবে না। আমি জগতের নাথ জগ্ননাথ তোমার পুরীতেই রয়েছি বিশ্বরূপ ধারণ করে তা তো
তুমি আজকে ধ্যান যোগে দেখতে পেলে—এই পুরীর সমুদ্র তোমার চরণ ধুয়ে দিচ্ছে কারণ আমি
তোমার দেহ পুরীতে অবস্থান করছি বিশ্বরূপ নিয়ে সেটাও তুমি দেখতে পেলে। এবার নিশ্চয়
তোমার অন্তরের সব দ্বিধা- দ্বন্দ মিটে গেছে?
প্রভু আমি তো তোমার জ্যোতি হয়ে কতকাল হিমালয়ের কোলে মাতাদির চরণ তলে ছিলাম –
কতবার দেহত্যাগ করেছি আর তোমার সান্নিধ্য লাভ করার চেষ্টা করেছি – কিন্তু বার বার
একই বাণী শুনেছি আরও উচ্চে এগিয়ে যাও । ভোলানাথ শিবের কাছে গেছি তিনিও সস্নেহে
আমাকে টেনে নিয়ে একই কথা বলেছেন। বেশ কিছুকাল থেকে কেনো আমি তাঁদের সান্নিধ্যলাভ
থেকে বঞ্চিত হচ্ছি? আমি তো সবার মাঝে সবার মতো হয়েই থাকতে চাই। জ্যোতি তোমার
পরিবার বিশ্বপরিবারে পরিণত হয়ে গেছে অনেক আগেই – এখন আর তোমাকে কারও সান্নিধ্যে যেতে হবে না –
তোমার মন্দিরেই সবায় ছুটে আসবে বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী হয়ে বেদ যজ্ঞ করার জন্য।
আমি
জগতের নাথ জগন্নাথ - আমার নামেরও যেমন অন্ত নেই, তেমনি রূপেরও কোন
অন্ত নেই। আবার আমার রূপও নেই, আকারও নেই, নামও নেই, অন্তও নেই। তুমি যেমনটি করে
আমাকে গড়তে চাইবে তোমার সাধনা দ্বারা, সেই রূপেই আমি তোমার নিকট প্রতিভাত হবো।
তুমি যে নামেই ডাকবে, সেই নামেই আমি সাড়া দিব। আমি অনন্ত—আমি ভুমা—আমি সর্বব্যাপ্ত
পবিত্র সত্তা। আমাকে যেভাবে পারো লও লুটে বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী হয়ে বেদ যজ্ঞের মাধ্যমে। জয় প্রভু জগন্নাথদেবের
জয়। জয় বেদ ভগবানের জয়।