বেদ যজ্ঞ সম্মেলনঃ—৩০/ ০৪/ ২০১৬
আজকের আলোচ্য বিষয় সর্ব শ্রেণির মানুষের জন্যঃ============= [বেদ যজ্ঞের
মাধ্যমে আগে জেনে নাও --এই পৃথিবীতে মনুষ্য জীবনের উদ্দেশ্য কি?]
বেদ
যজ্ঞ করেই মানুষকে জানতে হয় -- এই পৃথিবীতে মনুষ্য
জীবনের উদ্দেশ্য হলো নিজের আত্মা স্বরূপ সত্তা, যার উপর ভর করে এই জীবন তাঁকে জানা। আমি কে? এই সাড়ে তিন হাত দেহটাই কি আমি? তাহলে আমি এখানে আছি, আমার মন
ছুট-ছাট করে এদিক ওদিক যাচ্ছে দূরে নিকটে কি করে? মৃত্যুর পরে আমার দেহটা তো যেমন
তেমনিই রইলো এখানে পড়ে। তাহলে গেল কে?এখানে এলাম-ই বা কিভাবে?বারবার জন্ম মৃত্যুর
ছকেই বা পড়তে হচ্ছে কেন? সাগরের জল নদী
বেয়ে খাল বেয়ে নালার মধ্যে ঢুকছে।ঐ নালা খালের জলের উদ্দেশ্য বা বিপরীত গতি হল
আবার সাগরের অসীমতায় মেশা।তেমনি সৃষ্টির আগে আমরা একদিন ঐ মহাশূন্য মহাকাশের বিশ্ব
ব্যাপ্তিতে পরম চৈতন্য আকারে বুঁদ হয়ে ছিলাম। সৃষ্টির ধারায় ধারায় প্রকৃতির
দুর্নিবার গতিতে আমরা এই মানুষের আকার পেয়েছি। তাই আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যও হলো সেই অনন্ত গতির সাথে গতি মেশানো। সাগরের জল
বরফ হয়ে সাগরেই ভাসছে। বরফের সাধনা নিজেকে গলিয়ে আবার ঐ সাগরের গতিতে গতিময় হওয়া। তেমনি আমদেরকে এই দেহ থেকে মুক্ত হয়ে দেহাতীত হয়েই নিজ আত্মাকে জানতে হবে
এবং সেই আত্মাকে পরম চৈতন্যের সাথে মিলিত করে চৈতন্যময় দেহ লাভ করতে হবে। এই
চৈতন্যময় সুক্ষ দেহ লাভ করার জন্যেই আমাদের যত সংগ্রাম ও সাধনা এই পার্থিব দেহের
উপর ভর করে। আমরা আমাদের এই পার্থিব দেহে সাধনা করার জন্যে যাবতীয় উপাদান জন্মগত
অধিকার বলে পেয়ে থাকি এই সত্যকে কেউ অস্বীকার করতে পারি না। তাই মানুষকে নিজের
সম্পদ নিয়েই সাধন মার্গে স্থির থাকতে হয়। পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়,
মন, বুদ্ধি ও অহংকার এই তেরটি সম্পদকে সাধন মার্গের উপযুক্ত করে তুলতে হয় আত্মাকে
জানার জন্যে। কারণ এই তেরটি সম্পদ পার্থিব দেহের সাথে যুক্ত হয়ে থাকে এবং এই দেহ
ত্যাগ করার সাথে সাথে তাকে কেবল আত্মার উপর ভর করে চলতে হয়। এই আত্মজ্ঞান না থাকলে
তখন আর সে আলো দেখতে পায় না এবং কি করবে তা আর বুঝে উঠতে পারে না নিজের জ্ঞান না
থাকার জন্যে। এই অবস্থায় তার আত্মা প্রকৃতি নির্ভর হয়ে পড়ে এবং পুনঃ যে কোন যোনিতে
জন্ম নিতে বাধ্য হয়। আর যারা আত্মজ্ঞানের উপর ভর করে দেহত্যাগ করেন তাঁদের
জ্ঞানহারা হতে হয় না – তাঁরা নিজের জ্ঞানের উপর নির্ভর করে ইচ্ছাধীন দেহ ধারণ করতে
পারেন, আবার নাও করতে পারেন। এই প্রকৃতির সাধক পার্থিব দেহ ধারণ না করেও সবার
মঙ্গলের জন্যে বেদ যজ্ঞ করে চলেন, এই জগতের যে কোন পবিত্র সত্তার উপর ভর করে। হরি
ওঁ তৎ সৎ।